নিজস্ব প্রতিবেদন : ভবানীপুরের উপনির্বাচনে রাজ্যের সবচেয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য বিজেপির তালিকায় ছিল ছয় জনের নাম। যাদের মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট। তবে সেই সকল হেভিওয়েটদের পিছনে ফেলে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিজেপির প্রার্থী ঘোষণায় উঠে এলো প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের নাম। কারণ এই ৪১ বছর বয়সী মহিলার মধ্যেই মোদি শাহরা খুঁজে পেয়েছেন এক্স ফ্যাক্টর।
প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল, আগেও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সেই ভাবে বঙ্গ রাজনীতিতে পরিচিত মুখ নন তিনি। তবে শুক্রবার তার নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাত্র কয়েক ঘন্টায় বঙ্গ রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে দেখা যায় তাকে। পেশায় আইনজীবী এই মহিলাই এখন আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই জানা যাচ্ছে, পাঁচটি কারণে মমতার বিরুদ্ধে তাকে মাঠে নামিয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
১) একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যজুড়ে যে ভোট পরবর্তী হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ঘটনায় বিজেপির বহু ছোট বড় মেজো সমস্ত রকম তাবড় তাবড় নেতাদের চুপ করে বসে থাকতে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু একমাত্র এই আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল মাঠে নেমে বুক চিতিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। যা নজর কাড়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করার পর সেই মামলায় আদালত যে রায় দেয় তা বিজেপি নিজেদের বড় জয় হিসাবেই মনে করছে। আর এই বড়জোর সম্পূর্ণ কৃতিত্বই যাচ্ছে ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের দিকেই। কারণ এই লড়াইয়ে অন্যান্য আইনজীবীরা থাকলেও সামনে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল।
২) প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল জন্ম ও কর্মভূমি কলকাতা। ভবানীপুরের তিনি বড় হয়ে উঠেছেন এবং আইনজীবী হওয়ার দরুন এলাকায় নামডাক রয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যে বহিরাগত তকমা বারংবার বিজেপিকে বিঁধেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এবার তারা ঘরের মেয়েকেই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে মমতার বিরুদ্ধে।
পাশাপাশি উপনির্বাচনের এই লড়াইয়ে ভবানীপুর কেন্দ্রে দুই প্রার্থীই মহিলা। যে কারণে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে মহিলা হওয়ার দৌলতে প্রিয়াঙ্কা অন্যান্যদের অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে।
৩) ভবানীপুর এমন একটি কেন্দ্র যেখানে বাঙালিদের পাশাপাশি বড় রকমের আধিপত্য রয়েছে পাঞ্জাবি, গুজরাতি এবং হিন্দিভাষীদের। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কার মাতৃভাষা হিন্দি হলেও ছোট থেকেই কলকাতায় বড় হওয়ার কারণে ঝরঝরে বাংলা ভাষায় কথা বলতে তার কোনো অসুবিধা হয় না।
৪) বিজেপির তরফ থেকে মোটামুটি আগেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোন মহিলা প্রার্থীকেই বেছে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে নাম উঠে আসছিল দেবশ্রী চৌধুরীরও। তবে দেবশ্রী চৌধুরী যেহেতু একজন সাংসদ তাই ভোটে জিতল তাকে হয় সাংসদ পদ ছাড়তে হবে, অন্যথায় বিধায়ক পদ ছাড়তে হবে। তবে প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রে হারানোর কিছু নেই। যে কারণেই প্রিয়াঙ্কার নামই উঠে আসে প্রার্থী হিসাবে।
৫) প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের পেশাগত জীবনে কোন দাগ নেই, পাশাপাশি তার ভাবমূর্তিও স্বচ্ছ। যে কারণে এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে ইস্যু খুঁজতে বেগ পেতে হবে তৃণমূলকে। পাশাপাশি বিগত বিধানসভা নির্বাচনে অন্য দল থেকে আসা রাজনীতিক ও সেলেবদের যেভাবে টিকিট দিয়ে ভুল করেছে সেই ভুলও তারা আর করতে চায় না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বেছে নেওয়া হয় টিবরেওয়ালের নাম।