নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতের মতো দেড়শো কোটির দেশে প্রতিদিন ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ ট্রেনের ওপর নির্ভর করে যাতায়াত করেন। যে কারণে এই রেল পরিষেবাকে ভারতের গণমাধ্যমের লাইফ লাইন বলা হয়। ট্রেনে উঠেই আমরা অনেক কিছু দেখতে পাই যেগুলি আমাদের কৌতুহল তৈরি করে। তবে এই সকল কৌতুহলপূর্ণ জিনিসগুলি আসার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ, তা আবার অনেকেই জানেন না।
বর্তমানে এই রেল পরিষেবাকে উন্নত থেকে উন্নততর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নানান পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং হচ্ছে। ট্রেনে এখন চালু হয়েছে বায়ো টয়লেট। অন্যান্য পরিষেবার মত বর্তমানে এই টয়লেটেও উন্নতি হলেও একসময় এই ট্রেনে কোনরকম টয়লেট ছিল না। বিষয়টি আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি।
ব্রিটিশদের শুরু করার ট্রেনে এই টয়লেট ব্যবস্থা না থাকলেও পরে এক বাঙালির হুঁশিয়ারিতে সেই টয়লেট ব্যবস্থা ব্রিটিশরা আনেন ট্রেনে। ব্রিটিশরা ট্রেন চালু করলেও ৫৫ বছর ধরে কোনরকম টয়লেট ছাড়াই তারা ট্রেন চালাতো। তবে ওই বাঙালি যে চিঠি দিয়ে ট্রেনে এই টয়লেট ব্যবস্থা এনেছিলেন সেই চিঠি এখনো সুরক্ষিতভাবে রাখা রয়েছে।
ব্রিটিশরা ভারতে রেল ব্যবস্থার শুরু করে ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল। কিন্ত এরপর ১৯০৯ সাল পর্যন্ত কোনো কামরাতেই ছিল না টয়লেটের সুবিধা। তবে পরে এই টয়লেট ব্যবস্থা আসে অখিল চন্দ্র সেনের চিঠির দৌলতে। তিনি সেই সময়ই এই চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে।
অখিল চন্দ্র সেন ব্রিটিশ সরকারকে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন, “মহাশয় আমি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে সফর করার সময় আহমেদপুর স্টেশনে এসে আমার পেট অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়, এরপর আমি মলত্যাগের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু কার্য সম্পূর্ণ শেষ হওয়ায় আগেই গার্ড শিস দিতে শুরু করে। আমি এক হাতে লোটা আর অন্য হাতে ধুতি ধরে দৌঁড়াতে শুরু করেছিলাম কিন্তু এতে আমি প্ল্যাটফর্মে পড়ে যাই এবং সেখানে সবার সামনে অত্যন্ত বিব্রত বোধ করি। আমি আমার ট্রেন মিস করায় আহমেদপুর স্টেশনে রয়ে যেত বাধ্য হলাম।”
এর পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ সরকারকে লিখেছিলেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া এক যাত্রীর জন্য গার্ড কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ওই গার্ডকে ফাইন করার দাবি তুলেছিলেন। তা না হলে এই সংবাদ অন্যান্য সংবাদপত্রে তিনি জানাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। বস্তুত এই চিঠির পরেই নড়ে চড়ে বসে ব্রিটিশ সরকার এবং ট্রেনে পরবর্তীতে টয়লেট ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। অখিল বাবু যদি এই চিঠি সেই সময় ব্রিটিশদের না লিখতেন তাহলে কবে ট্রেনে এই টয়লেট ব্যবস্থা আসত তা কারোর জানা নেই।