নিজস্ব প্রতিবেদন : গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার উত্তরপ্রদেশে বিকাশ দুবের পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যুর পর ভারতজুড়ে দিনভর সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে এই ঘটনা। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন মহল তাদের নানান ধরনের মতামত পোষণ করেছেন। অনেকে এনকাউন্টারের স্বপক্ষে তাদের মতামত জানিয়েছেন আবার অনেকে এই এনকাউন্টার নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। আর এর আগেও দেশে যতগুলি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে সেগুলির ক্ষেত্রেও এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আর বিভিন্ন সময়ে এই সকল এনকাউন্টার এবং এনকাউন্টারের সাথে যুক্ত হয়ে রয়েছে ভারতের ১০ নামকরা এনকাউন্টার স্পেশালিস্টের নাম। যাদের কারোর কারোর নামে ১০৪ টি এনকাউন্টারের রেকর্ডও রয়েছে এবং এই সকল পুলিশ আধিকারিকের নাম শুনলে ভয়ে কাঁপেন দুষ্কৃতীরা।
১) অমিতাভ যশ : IPS অমিতাভ যশ হলেন উত্তরপ্রদেশের STF পুলিশের IG। এনার নামের পাশে এখনো পর্যন্ত ৩৬ টি এনকাউন্টারের তালিকা যুক্ত হয়েছে। শোনা যায় এই পুলিশ আধিকারিক যে জায়গায় পোস্টিং হয়ে যান সেখানকার দুষ্কৃতীরা ভয়ে আবার জেলে ঢুকে যায় অথবা সেই জেলা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।
২) রাজবির সিংহ : রাজবির সিংহ হলেন দিল্লি পুলিশের একজন IPS অফিসার। ইনি মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে IPS আধিকারিক হিসাবে নিজেকে অন্যান্যদের থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছেন তার কাজকর্মের জন্য। রাজবীর সিংহের নামের পাশে ৫০টি এনকাউন্টারে তালিকা যুক্ত রয়েছে। এই অফিসারকে ২০০৮ সালে গুরগাঁওয়ে একজন প্রোমোটার গুলি করে হত্যা করেছিল। এখন রাজবীর সিংহের ছেলে রোহিত যাদবও একজন IPS আধিকারিক।
৩) রাজেশ কুমার পান্ডে : উত্তরপ্রদেশের বরেলি রেঞ্জের একজন DIG IPS পুলিশ অফিসার হলেন রাজেশ কুমার পান্ডে। ইনিও এখনো পর্যন্ত ৫০ টি এনকাউন্টার করেছেন। ইনি আলিগড়ের এসএসপি-ও ছিলেন। গ্যাংস্টার শ্রীপ্রকাশ শুক্ল এনকাউন্টারের ঘটনায় তিনি ছিলেন বিশেষ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের এই অফিসার এখনো পর্যন্ত চারবার বীরত্বের পুরস্কার পেয়েছেন।
৪) অনন্ত দেব : কানপুরের এসএসপি অনন্তদেব ২০০৬ সালে IPS আধিকারিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি এর আগে ফৈজাবাদের এসএসপি-ও ছিলেন। পুলিশ আধিকারিক থাকা অবস্থায় ইনি ৬০টি এনকাউন্টার করেছেন। আর এই সকল এনকাউন্টারের মধ্যে তিনি বেশি করেছেন চম্বলে থাকা অবস্থায়। আর এই সকল এনকাউন্টারের মধ্যে চম্বলের প্রখ্যাত দুষ্কৃতী দুদুয়ার নামও রয়েছে।
৫) দীপক কুমার : IPS দীপক কুমার চিত্রকূটের ডিআইজি অফিসার। ইনি বিহারের বাগুসরাই জেলার বাসিন্দা। তবে পুলিশ অফিসার হিসেবে তিনি উত্তরপ্রদেশে বসবাস করেন। ইনার খাতায় রয়েছে ৫৬ টি এনকাউন্টারের নাম।
৬) শচীন হিন্দুরাও বাজে : মহারাষ্ট্র পুলিশে কর্মরত অবস্থায় শচীন হিন্দুরাও বাজে ৬৩ জন কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে এনকাউন্টার করেছেন। এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট প্রদীপ শর্মা এনার পরামর্শদাতা ছিলেন।
৭) বিজয় সালস্কর : মহারাষ্ট্র পুলিশের পুলিশ ইন্সপেক্টর ২৬ নভেম্বর মুম্বাই জঙ্গি হামলায় শহীদ হয়েছিলেন। তিনি যখন কর্মরত অবস্থায় ছিলেন তখন ৮৩ টি এনকাউন্টার করেছিলেন এবং আরও অনেক অপরাধীদের শেষ করেছিলেন।
৮) প্রফুল ভোঁসলে : ছোটা শাকিলের এনকাউন্টারের সাথে এই পুলিশ অফিসারের নাম জড়িয়ে ছিল। অন্যান্য এনকাউন্টার স্পেশালিস্টদের নামের মত ইনার নামেই দুষ্কৃতীরা ভয়ে কাঁপে। তিনি এখনো পর্যন্ত ৮৪ টি এনকাউন্টার করেছেন।
৯) দয়া নায়ক : যখনই এনকাউন্টারের প্রসঙ্গ আসে তখন এই পুলিশ অফিসাররা নায়কের নাম উঠে আসে। দয়া নায়ক হলেন মুম্বাই পুলিশের সবথেকে খ্যাতনামা ও সুপরিচিত এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট। ইনি এতটাই প্রসিদ্ধ এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট যে ইনার জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছিল নানা পাটেকারের ‘আব তাক ছাপন্ন’ সিনেমাটি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি Anti-Terrorism Squad অফিসার হন। দয়া নায়ক ১৯৯৫ সালের মুম্বাই পুলিশে যোগ দেন এবং তারপর দু-তিন বছরের মধ্যেই তিনি এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট খ্যাতি পান। এখনো পর্যন্ত তিনি ৮০ জন গ্যাংস্টার অথবা অপরাধীকে এনকাউন্টার করেছেন।
১০) প্রদীপ শর্মা : মহারাষ্ট্র পুলিশের প্রদীপ শর্মা অপরাধীদের মৃত্যুর আরেক নাম বলে পরিচিত। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে যেসকল গ্যাংস্টারদের মধ্যে লড়াই চলত সেই ঘটনায় ইনি ১০৪ জন গ্যাংস্টারকে এনকাউন্টার করেছিলেন। ২০১০ সালে ইনাকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর যখন তিনি পুনরায় পুলিশে যোগদান তখন থেকে অনেক পুলিশ অফিসারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট তৈরি করেন। বছরখানেক আগে এই পুলিশ অফিসার চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে শিবসেনায় যোগ দেন।