নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশ ও বিশ্বজুড়ে চলা ধর্ষণ এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলায় একদিকে সমাজ জীবনে ক্রোধের মাত্রা যেমন বাড়ছে অন্যদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ধর্ষণ মোকাবিলায় নতুন নতুন আইনের সাহয্য নিচ্ছে। ভারতে বেশ কয়েকবছর আগেও ধর্ষণ যে অপরাধ তা আইনত স্বীকৃত ছিল না। নতুন আইন এনে এই অপরাধের মোকাবিলা চলছে।
আমেরিকা, ইউরোপে বিশেষ করে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডে ধর্ষণ সমস্যাকে বর্তমান সময়ের বাস্তবতা মাথায় রেখে সমাধান করার চেষ্টা চলছে। আবার সৌদি আরব, ইরান, আফগানিস্থানের মত দেশ ধর্ষণ সমস্যা মোকাবিলায় এখনো পুরনো ইসলামিক আইন মেনে আদিম প্রথায় তাঁর সমস্যা সমাধান করে চলেছে। চীন আবার জারি রেখেছে পুরনো আইনি প্রথার সাথে নতুন আইনও।
কিছুদিন আগেই পাকিস্তানে এক ফরাসি মহিলার ধর্ষণ হয়। সৃষ্টি হয় অদ্ভুত বিচার সমস্যার। শরিয়া আইন মতে তাদের প্রকাশ্যে গুলি করে বা শিরোচ্ছেদ বা পাকিস্তানের আইন মত মৃত্যুদণ্ডের বদলে ইমরান খান দোষীদের নুপুংসক করার দাবি জানান। কারণ মৃত্যুদণ্ড দিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নানা ধরনের বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে দেবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণে শাস্তির আইনকানুন
ভারত : ২০১৩ সালের আগে ভারতে ধর্ষণ গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হতো না। ২০১৩ সালে অ্যান্টি রেপ বিল আনা হয়। ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির ১৪ বছরের শাস্তির আইন আনা হয়। যদি ধর্ষিতাকে খুন করা হয় বা ধর্ষণের কারণে মারা যায়, নতুন আইনে ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। নির্ভয়া ধর্ষণ মামলায় দোষীদের এই আইনে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
ফ্রান্স : ফ্রান্সে কোন মৃত্যুদণ্ড নেই। যদি কোন ধর্ষণ হয় তার শাস্তি ২০ থেকে ৩০ বছরের জেল। তাও সেটা নির্ভর করে ধর্ষিতা ও ধর্ষণের ঘটনার উপর। সাধারণ ধর্ষণ কেসে শাস্তি ১৫ বছর। যদি ধর্ষিতার বয়স ১৫ বছরের নীচে হয় সেক্ষেত্রে শাস্তি ২০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। যদি ধর্ষিতা মারা যায় সেক্ষেত্রে জেল হতে পারে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। আবার ধর্ষণ করার সময় অত্যাচার করা হলে শাস্তি যাবজ্জীবন। জোর করে যেকোন প্রকার শারীরিক সম্পর্ক ফ্রান্সে ধর্ষণ বলে মানা হয়।
সৌদি আরব : আরব একটি এমন দেশ যেখানো আজও ধর্ষণের শাস্তি শরিয়া আইন মেনে হয়। হাজার বছর ধরে যার কোন পরিবর্তন হয়নি। ধর্ষকের শিরোচ্ছেদ করা হয় জনগণের সামনে। তারপর সেই মাথা ও শরীর আবার সেলাই করা হয়। অনেক সময় ধর্ষককে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। এই আইন পুরুষ ও নারী দুজনের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হয়।
চীন : চীন ধর্ষণ নিয়ে কঠোর সাজা বহাল রেখেছে। ধর্ষণ প্রমাণিত হলে ধর্ষকের প্রথমে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয় তারপর ফাঁসি দেওয়া হয়। নতুন আইনে ১৪ বছরের নীচে কাউকে ধর্ষণ করলে তা অপরাধ বলে স্বীকৃত হয়। সে যদি প্রসটিটিউট হয় তাও। চীনে ২০১৫ সাল থেকে সমলিঙ্গ ধর্ষণ অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়।
ইরান : ইরানে ধর্ষককে প্রকাশ্যে গুলি করে বা ফাঁসি দিয়ে সাজা দেওয়া হয়। ধর্ষিতা ধর্ষককে প্রকাশ্যে গুলি করে মারতে পারে। ধর্ষিতা চাইলে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবু ধর্ষককে ১০০ ঘা চাবুক ও যাবজ্জীবন জেল খাটার শাস্তি বহাল থাকবে।
নেদারল্যান্ড : ধর্ষণে জেল ৪ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। যৌন কর্মীকে শারিরিক অত্যাচার করলে জেল হতে পারে ৪ বছর পর্যন্ত। ধর্ষিতার মৃত্যু হলে শাস্তি ১৫ বছর জেল।
আফগানিস্থান : আফগানিস্তানে ধর্ষিতা চারদিনের বিচারে ধর্ষকের মাথায় গুলি মেরে হত্যা করতে পারে। কখনো কখনো ধর্ষকের ফাঁসি হয়। তবে অধিকাংশ সময় ধর্ষণের খবর এই দেশে প্রকাশ্যে আসেনা।