লাল্টু : বাঙ্গালীদের বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম এবং সব থেকে বড় উৎসব হলো দুর্গোৎসব। দুর্গোৎসবে বাংলার প্রতিটি মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। চারদিন আনন্দের পর আবার বছরভর অপেক্ষা এই দিনগুলি ফিরে পাওয়ার।
এ বাংলায় প্রাচীনকাল থেকেই দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। আর এই প্রাচীনত্বের দিক দিয়ে বনেদি বাড়ির দুর্গোৎসবগুলির রীতিনীতিতে নানান ধরনের ফারাক দেখা যায়। আসলে এই রীতিনীতি সেই প্রাচীনকাল থেকেই বহন করে আসছেন বংশপরম্পরায়। এমনই এক দুর্গাপুজোর সন্ধান পাওয়া গেল যেখানে মহাষ্টমীতে দেবীর ইচ্ছাই ভোগ হয় হলুদ মুড়ি, ৮ রকমের কলাই ভাজা এবং আদা কুচি দিয়ে। কিন্তু কেন এমন ভাবেই পালন করা হচ্ছে এই দুর্গাপুজো?
এমন আলাদা ধরনের দুর্গাপুজোর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেন বা মুন্সী বাড়ির দুর্গাপুজোয়। এই পরিবারের সদস্য মৌসুমী সেন জানিয়েছেন, “মা দুর্গা অষ্টমীর দিন হলুদ মুড়ি, ৮ রকমের কলাই ভাজা এবং আদাকুচি চেয়ে নিয়েছিলেন। আর তারপর থেকেই মহাঅষ্টমীতে এগুলি দিয়েই ভোগ হয়। আর এগুলি সেদিনই ভাজা অর্থাৎ তৈরি করা হয়।” এর পাশাপাশি এই দুর্গাপুজোর আরও একটি বিশেষত্ব হল এখানে কুমারী পুজো হয় অষ্টমঙ্গলায়।
অন্যান্য পুজোর থেকে আলাদা গ্ৰাম বাংলার প্রাচীন এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, আনুমানিক ১২৯০ সালে (আরও প্রাচীন বলেও দাবি করা হয়।) ঈশান চন্দ্র মুন্সী ওরফে কুচীল চন্দ্র সেন রাজনগরের রাজার মুন্সেফ থাকাকালীন এই পূজোর প্রতিষ্ঠা করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপ্নাদেশে মুন্সী ঈশান চন্দ্র এই পূজো আরম্ভ করেছিলেন। যদিও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু মায়ের ইচ্ছে ছিল সাধ্যমত তাকেই পূজো করতে হবে। তারপরই ভেদে গুসকরার সত্তার গ্ৰামে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন বাড়ির দুর্গা। পরে সত্তার থেকে হেতমপুরের সেন বাড়ির পৈতৃক ভিটেই পূজিত হয় মুন্সী বা সেন বাড়ির দুর্গা। প্রথম দিকে পটে আঁকা দুর্গার পূজা হলেও এখন নিম কাঠের তৈরি দুর্গার পূজা হয়।
পূজো চারদিন শুধুমাত্র সেন পরিবারের সদস্যরাই নয়, এই পূজোকে ঘিরে গ্ৰামবাসীদের উদ্দিপনা চোখে পড়ার মতো। তবে এবছর রাশ টেনেছে করোনা। চিন্তিত পরিবারের সকলেই। মায়ের আগমন থেকে বিদায় কিভাবে কাটবে সেই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলেছে সেন পরিবারের সদস্যদের।