দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনকে ঘিরে লাঠি কেনাবেচায় ঐতিহ্যবাহী সম্প্রীতির লাঠি মেলা

Shyamali Das

Updated on:

Advertisements

লাল্টু : বর্গী হামলা থেকে বাঁচতে একসময় বাড়িতে বাড়িতে লাঠি রাখার রেওয়াজ তৈরি হয় বীরভূমের কৃষ্ণনগর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। শতাব্দী প্রাচীন সেই রীতি ঘিরেই আজও বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের কৃষ্ণনগর গ্রামে বিজয়া দশমীর পরদিন অর্থাৎ একাদশীতে বসে ঐতিহ্যবাহী লাঠি মেলা। মেলা মূলত দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, তবে লাঠি কেনাবেচাতেই ঐতিহ্য এই মেলার। যেখানে লাঠি নিয়ে আসেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা আর দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে আনেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা, যেখানে লাঠি ক্রেতারা হলেন উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন।

Advertisements

দুবরাজপুর ব্লকের এই কৃষ্ণনগর গ্রামের একদিনের এই সম্প্রীতির মেলাকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ থাকে চরমে। হিন্দুরা প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনের জন্য হাজির হয় কৃষ্ণনগর গ্রামে আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছােট, বড়, মােটা বিভিন্ন রকমের লাঠি নিয়ে হাজির হন এই মেলায়। লােহাগ্রাম, যশপুর, পছিয়াড়া, কান্তোড়, সালুঞ্চি সহ এলাকার ১০-১২টি দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য জমায়েত হয় কৃষ্ণনগর গ্রামে।

Advertisements

এবছর এই মেলা ২৭১ বছরে পা রাখলো জানা যায়। ইতিহাস অনুযায়ী, মুঘল সম্রাটের অবসানে হিন্দু রাষ্ট্র
স্থাপনের জন্য মহারাষ্ট্র শক্তির উত্থান হয়। সে সময় বর্গীর হামলায় জর্জরিত হয় বীরভূম সহ অন্যান্য এলাকার মানুষ। কারন বীরভূম ছিল মহারাষ্ট্র শক্তির প্রবেশ দ্বার। তাই বর্গীদের হামলা থেকে রক্ষা পেতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লাঠি, বাঁশ সংগ্রহ করে রাখা হত। তারপর থেকেই মেলার উৎপত্তি।

Advertisements

এই মেলায় ভিড় উপচে পড়ে। শতাব্দী প্রাচীন লাঠি বা সম্প্রীতির মেলা প্রসঙ্গে বিশদে জানান এলাকার প্রবীণ নাগরিক কিরিটিভূষণ রক্ষিত ও যশপুর অঞ্চলের প্রধান সেখ রফিক।

কিরিটিভূষণ রক্ষিত জানান, “কৃষ্ণনগরের এই লাঠি মেলার উৎপত্তি বর্গী হাঙ্গামার উপদ্রব থেকে বাঁচতেই। ছোট থেকেই আমি এই মেলা দেখে আসছি। এই মেলা শুধু লাঠি মেলা নয়, এই মেলা হল সম্প্রীতির মেলা।”

যশপুর পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত প্রধান শেখ রফিক জানান, “শতাব্দী প্রাচীন এই মেলায় হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এসে জড়ো হয়। মেলা যদিও দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন এবং লাঠি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে। এখানে সবাই এসে জমজমাট ভাবে মেলা উপভোগ করেন।”

Advertisements