নিজস্ব প্রতিবেদন : যখন করোনা অতিমারির মধ্য দিয়ে বইছে, যখন বিশ্বের প্রতিটি মানুষ তাকিয়ে রয়েছে ভ্যাকসিনের দিকে ঠিক তখন মঙ্গলবার রাশিয়া সরকার ঘোষণা করে তারাই প্রথম করোনা টিকা তৈরি করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এমন ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ করোনা টিকা তৈরীর ক্ষেত্রে দৌঁড়ে রয়েছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারতের মত বেশ কয়েকটি দেশ। আর যদি রুশ প্রেসিডেন্টের দাবি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তারা অন্যান্য দেশকে পিছনে ফেলে দিয়েছে এটাই বলা বাহুল্য।
রাশিয়ার তরফ থেকে তৈরি করা এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পুটনিক ভি’। এই টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয় জুন মাসের ১৮ তারিখ। প্রথম দফার ট্রায়ালে ৩৮ জনের উপর প্রয়োগ করা হয় এই টিকা। তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই করোনা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা জন্মেছে বলে দাবি করেছে রুশ সরকার। তবে এই টিকা নিয়ে রাশিয়ার ঘোষণার পরই আন্তর্জাতিক মহলে নানান প্রশ্ন উঠতে থাকে। প্রশ্ন উঠতে থাকে টিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে সবকটি পর্যায় মানা হয়েছিল কিনা তা নিয়ে। তবে টিকার সুরক্ষা নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট থেকে অন্যান্যরা সবাই জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট পুতিন দেশের মানুষের এবং বিশ্বের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য এটাও জানিয়েছেন, তিনি এই টিকা তার মেয়ে দিয়েছেন। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সামান্য জ্বর আসতে পারে, তবে তা দ্রুত সেরে যায়। যেটা তার মেয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছিল।
আর এই রাশিয়ার তৈরি এই টিকা সম্পর্কিত খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিশ্বজুড়ে চাপা উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই টিকার খবর শুনেই করো না থেকে নিস্তারের পথ দেখতে শুরু করেন। রাশিয়ার দাবি, ইতিমধ্যেই বিশ্বের ২০টি দেশ ১০০ কোটি ডোজ টিকার অগ্রিম অর্ডার দিয়েছে। তাহলে কি সাধারণ মানুষদের এখনই নিস্তার! না নিস্তার এখনই নেই। কারণ এই টিকা জনসাধারণকে দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও বেশ কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে। এখনই এই টিকা জনসাধারণের উপর প্রয়োগ করা হবে না। প্রয়োগ করা হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। অর্থাৎ টিকা আবিষ্কার হয়েছে ঠিকই তবে খোদ রাশিয়ার সাধারণ মানুষকেই এই টিকা পেতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত চার মাস। সুতরাং যেমনটা মনে করা হচ্ছিল তেমনটা নয় বরং সে গুড়ে বালি।
টিকা সম্পর্কিত ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিনের পাশে বসে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রী মিখাইল মুরাশকো জানিয়েছেন, “জানুয়ারি মাস নাগাদ গণ টিকাকরণ শুরু করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।” তবে সাধারণ মানুষ এখনই ঠিকানা পেলেও তিনি জানিয়েছেন, “যাঁরা প্রথমসারির যোদ্ধা, কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত তাঁদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া অবিলম্বে শুরু হয়ে যাবে।”
পাশাপাশি রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, “দেশের নাগরিকদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে ধাপে ধাপে। টিকাকরণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তাঁদেরই যাঁরা সরাসরি কোভিড আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন।” অর্থাৎ রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথাতেও স্পষ্ট স্বাস্থ্য কর্মীদেরই আগে টিকা দেওয়া হবে। রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী পরবর্তী পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে শিক্ষকদের। কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, ‘তাঁরা শিশুদের সংস্পর্শে থাকেন।’