নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এই সময় সকল দেশবাসীর ভরসা একমাত্র ভ্যাকসিনের উপর। তাই ভ্যাকসিন কবে আসবে তা জানতে উদগ্রীব হয়ে আছেন সকল দেশবাসী।
জুলাই মাসের প্রথমদিকে ICMR-এর একটি নির্দেশিকা ঘিরে মনে করা হচ্ছিল হয়তো ১৫ই আগস্টের মধ্যেই ভারত বায়োটেক সংস্থার নির্মিত ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে। এরপর দেশের গবেষক ও বৈজ্ঞানিকরা এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এত তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল করলে পরীক্ষার স্তরে নানা রকম ভুল ত্রুটি থেকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভুল ভ্যাকসিন প্রয়োগে বিপুল সংখ্যক মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা জানান যে এই ভ্যাকসিন নিয়ে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।
এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত সংসদীয় প্যানেলকে স্পষ্টই বলে দেন, আগামী বছরের (অর্থাৎ ২০২১) আগে কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব নয়। এর সাথে কেন্দ্রের আধিকারিকরা আরও বলেন, ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে যদি ভ্যাকসিন আসে সেটাই হবে সবথেকে দ্রুত ভ্যাকসিন। এর আগে ভ্যাকসিন আনা সম্ভব নয়। কারণ তাড়াহুড়ো করে ভ্যাকসিন এনে মানুষের জীবন নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকি তারা নিতে চান না।
এরপর অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় নির্মিত কোভিশিল্ড টিকার ট্রায়াল শুরু হয় সেরামে। কিন্তু এই টিকার তৃতীয় ট্রায়ালের সময় শোনা যায় একজন মহিলা স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই এই ট্রায়ালও স্থগিত রাখা হয়।
তবে এসবের মাঝেই দেশে সুখবর এলো। জানা গেল ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন পশুর উপর করা ট্রায়ালে সফল হয়েছে। এই ভ্যাকসিন পশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানান, আশা করা যাচ্ছে যে ডিসেম্বরের মধ্যেই এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আর সামনের বছরের মধ্যেই এই ভ্যাকসিন বাজারে আনা যাবে।
তবু সকলের মনে একটা প্রশ্ন একটা সংশয় ছিল। ঠিক কবে নাগাদ আসবে করোনার ভ্যাকসিন?
সেই প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রবিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন জানান, ভ্যাকসিনের আসার সময় সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সম্ভবত আগামী বছর শুরুর দিকেই ভ্যাকসিন চলে আসবে। তিনি সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, “আশা করা যাচ্ছে ২০২১ সালের প্রথমদিকেই মার্চ মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন চলে আসবে।” আর এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করবেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন নিজেই। আপাতত করোনার ভ্যাক্সিনের দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই। ভ্যাক্সিন এলে আতঙ্কে থাকার এই দীর্ঘ সময় শেষ হবে। আমরা দেখতে পাব আতঙ্ক মুক্ত একটা নতুন সকাল।
ভ্যাকসিন এলে কারা আগে ভ্যাকসিন পাবেন এই নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি প্রশ্ন আছে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভ্যাক্সিন বিলির ক্ষেত্রে প্রয়োজনের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে, মানুষের আর্থিক ক্ষমতার ওপর নয়। তার কথায়, “ভ্যাকসিনের দামও মানুষের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ভ্যাকসিন বিলি করা হবে না। যাদের সব থেকে বেশি প্রয়োজন ভ্যাকসিনের তারাই আগে ভ্যাকসিন পাবেন।”