নিজস্ব প্রতিবেদন : শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও দাতা কর্ণের নাম আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। মহাভারতের কর্ণ একদিকে যেমন ছিলেন সাহসী, বীর, নিঃস্বার্থপর, ঠিক সেই রকমই অন্যদিকে ছিলেন দানশীল। আর সেই কারণেই তিনি দাতা কর্ণ নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। বর্তমান কলিযুগে এই ধরনের ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায় না। তবে দাতা কর্ণের মতোই একদম প্রতি এবার বিশ্বভারতীকে (Visva Bharati) ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি দান করে নজির গড়লেন।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সাধন স্থল, ছোট থেকেই তারা পড়াশোনা করেছেন বিশ্বভারতীতে। পরবর্তীতে বিদেশে গেলেও এই বিশ্বভারতীকে তারা কখনোই ভুলতে পারেননি। যেখানে পড়াশোনা করে বিদেশে পা রাখা সেই বিশ্বভারতীকে এবার তারা আড়াই বিঘা জমি, বাড়ি সহ প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি দান করলেন। পেশায় বিজ্ঞানী অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী নিতা মুখোপাধ্যায় এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেন।
অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় হলেন মুর্শিদাবাদের কাকগ্রামের বাসিন্দা। সেখান থেকে ১৯৫১ সালে তিনি বিশ্বভারতীর পাঠভবনে পড়াশোনার জন্য আসেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দেন ইংল্যান্ড। এরপর তার গবেষণা শুরু হয় মেটেরিয়াল সায়েন্স নিয়ে। তার ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পেটেন্ট। অন্যদিকে ইংল্যান্ডে গবেষণা করা কালীন ১৯৯৭ সালে তিনি শান্তিনিকেতনের সীমান্ত পল্লীতে একটি জমি এবং বাড়ি কেনেন। আউটহাউস, গোয়ালঘর, লন, পুকুর সবকিছুই রয়েছে ওই জমির মধ্যে। এই সমস্ত কিছুই তিনি এবার বিশ্বভারতীকে দান করলেন।
অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় এবং তার স্ত্রী নিতা মুখোপাধ্যায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা দুজনেও এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনো শেষ করে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। নিজের ছেলেমেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড় করানোর পর ওই দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন তাদের শান্তিনিকেতনে থাকা সম্পত্তি বিশ্বভারতীকে দান করবেন আর সেই সিদ্ধান্ত মত কাজ করে ফেলেন। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ওই দম্পতির এমন সম্পত্তি দানে স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী থেকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ওই দম্পতির প্রশংসা করার পাশাপাশি এমন সম্পত্তি দানের পরিপ্রেক্ষিতে নাম না করে অমর্ত্য সেনকে বিঁধেছেন। তিনি জানান, “একজন রয়েছেন যিনি ছয় কাঠা জায়গার জন্য কত কিনা করছেন। আর একজনকে দেখুন যিনি নির্দ্বিধায় গুরুদেবকে এত বড় সম্পত্তি দান করে দিলেন।” অন্যদিকে অরবিন্দ বাবু জানিয়েছেন, তারা বিশ্বভারতী থেকে শৃঙ্খলা শিখেছেন, বিশ্বভারতী থেকে অনেক কিছু পেয়েছেন। তাই তাদের জীবনের স্বপ্ন ছিল তাদের সবকিছু বিশ্বভারতীকে দিয়ে যাওয়ার। আর সেই বড় কাজ সমাপন করে এবার তারা লন্ডন ফিরে যাবেন।