পশ্চিমবঙ্গ সমুদ্র সৈকত ও উপকূলে পাওয়া গেলো নতুন প্রাণের সন্ধান। এক নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। তাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবাংলার দিঘা, বকখালি, তাজপুর ও নিউ দিঘার উপকূলে এই নতুন প্রজাতির প্রাণী প্রথম দেখা যায়। কেবল এই জায়গা গুলোই নয় উদয়পুর, তালসারি, চাঁদিপুর ও কণিকা আইল্যান্ডেও দেখা মিলেছে এই নতুন জীব। এই নিয়ে বিদেশের অনেক গবেষণা পত্রেও লেখালেখি হয়ে চলেছে প্রচুর। জীববিজ্ঞানীরা এই নতুন পাওয়া প্রজাতির সামুদ্রিক জীবের নামকরণ করেছেন ‘বে অফ বেঙ্গল হেড-শিল্ড সী স্ল্যাগ’।
আমাদের রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় পাওয়া এই প্রাণীর দেখতে কেমন সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, এই প্রাণীটি কালো রঙের, এটি আয়তনে ভীষণই ছোটো। এটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১২ থেকে ১৪ মিলিমিটারের মত। শরীরে কোনও মেরুদন্ড নেই, হাত-পাও নেই। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বুকে ভর দিয়ে চলাচল করে হেড-শিল্ড সী স্ল্যাগ (sea slug)। ঠিক এই কারণেই সমুদ্রতটের বালিতে এদের চলাচলের ছাপও পাওয়া গিয়েছে।
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কলকাতার অধিকর্তা ডঃ ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় এক দশক আগেই এই নতুন সামুদ্রিক প্রাণীর সন্ধান মিলেছে। আর তখন থেকেই ‘বে অফ বেঙ্গল হেড-শিল্ড সী স্ল্যাগ’-কে নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। সব গবেষণা হবার পরই তারা এই খবর প্রকাশ করেছেন। তার মতে গবেষণায় এও জানা যায় যে এই প্রাণীর বংশ বিস্তার করার সময় হলো নভেম্বর থেকে জানুয়ারি। জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক সদর দপ্তর সহ আরও দুটি কেন্দ্রের সংগ্রহশালায় এই নতুন প্রাপ্ত প্রাণীটির নমুনা সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।
শুধু আমাদের রাজ্যেই নয়, বাংলার সীমানা পেরিয়ে ভিন রাজ্যেও এই প্রাণীর অস্থিত্ব দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বকখালি থেকে শুরু করে ওড়িশার কণিকা আইল্যান্ডের মাঝের নানা অংশে দেখা গেছে এই জীব। মোটামুটি ২৯৫ কিলোমিটার জুড়ে এই প্রাণীর বিচরণ। এর আগে থাইল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলে ঠিক এমনই এক সামুদ্রিক প্রাণী দেখা গিয়েছিল । জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মারফত জানা যায়, এই প্রাণীকে নিয়ে নানা সমীক্ষা ও দীর্ঘ গবেষণা প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন বাসুদেব ত্রিপাঠী, প্রসাদচন্দ্র টুডু, শেখ সাজন, সৌমেন রায়, অমিত মুখোপাধ্যায় ও অনিল মহাপাত্র প্রমুখ বিজ্ঞানীগণ।
এই নতুন জীবের খবর জানাজানি হতেই দিঘা, বকখালি, তাজপুর ও নিউ দিঘা উপকূলে পর্যটকদের মধ্যে এই প্রাণীকে দেখার ও খুঁজে বার করার প্রবণতা প্রবল বেড়ে গেছে। কিন্তু আকারে এত ছোট এক প্রাণীকে সমুদ্র সৈকতের মধ্যে খুঁজে বের করা বেশ কষ্ট সাধ্য বিষয়। তবে এই প্রাণীর অস্তিত্বের কথা প্রমাণ হতেই ‘বে অফ বেঙ্গল হেড-শিল্ড সী স্ল্যাগ’ও জুড়ে গেলো আমাদের রাজ্যের জীব বৈচিত্র্যের তালিকায়।