করোনা রুখতে রাজ্যে লাগু হচ্ছে আইন, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বজুড়ে তৈরী হয়েছে যুদ্ধের পরিস্থিতি। দেশের সাথে দেশের যুদ্ধ নয়। ভাইরাসের সাথে দেশের যুদ্ধ। কোভিড-১৯ ভাইরাসকে ঠেকানোয় এখন সারা বিশ্বের লক্ষ্য। যত দিন যাচ্ছে তত সারা বিশ্বে নিজের অস্ত্বিত্বের কথা জানান দিচ্ছে কোভিড-১৯ ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কোভিড-১৯ ভাইরাসকে ‘প্যানডেমিক’ অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চীন। সারা বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০০ ছাড়িয়েছে। ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১১৫ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। যেভাবে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত সকলে।

করোনা ভয়ে জমায়েত না করার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্র সরকার। রাষ্ট্রপতি ভবনে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দিল্লীতে বন্ধ করা হয়েছে স্কুল, কলেজ। কলকাতায় স্কুল কলেজ, প্রেক্ষাগৃহ, অডিটোরিয়াম, মেলা খেলা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে আইপিএল। করোনা সংক্রমণ আটকাতে ১৮৯৭ সালের ব্রিটিশ মহামারি আইনের ২ নং ধারা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দিল্লীতে বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সচিবেরা, সেনাবাহিনী ও আইটিবিপির প্রতিনিধিরা ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নেন দেশে করোনা যাতে প্রভাব বিস্তার না করতে পারে তার জন্য ১৮৯৭ সালের ব্রিটিশ মহামারি আইন লাগু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও এটি প্রথমবার নয়। অতীতেও এই এইনের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। আর এবার সেই পথেই হাঁটলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৮৯৭ সালের ব্রিটিশ মহামারি আইন প্রণয়ন করার পিছনেও একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৮৯৭ সালে তৎকালীন বোম্বে যা এখন মুম্বই, সেখানে প্লেগ মহামারীর আকার নিয়েছিল। প্লেগের মোকাবিলা করতেই তখনকার ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ‘১৮৯৭ সালের ব্রিটিশ মহামারি আইন’ প্রণয়ন করেন। এই আইনটিতে মহামারীর সাথে মোকাবিলা করার জন্য কর্তৃপক্ষের হাতে কিছু ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেই আইনের ক্ষমতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্লেগ আক্রান্ত রোগীদের খুঁজে বের করতেন। তাঁদের আলাদা জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করতেন।

কি রয়েছে এই আইনে?

এই ১৮৯৭ সালের ব্রিটিশ মহামারি আইনের চারটি ধারা রয়েছে। এই আইনে দেশে মহামারি দেখা দিলে সরকারের হাতে কি কি ক্ষমতা থাকতে পারে তা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই আইনের দ্বিতীয় ধারায় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিধি তৈরির অধিকার দেওয়া হয়েছে।

এই আইন অনুযায়ী মহামারি রুখতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। রেলপথ, সড়কপথ, আকাশপথে যেকোনোও ভ্রমনকারী ব্যক্তিদের শারীরিক পরীক্ষা নিতে পারেন। যখনই কোনও রাজ্য সরকার মনে করবে মহামারী ছড়িয়ে পড়বার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যে আইন রয়েছে, তার দ্বারা এই ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তখন সরকার নিজে বা কোনও ব্যক্তিকে অধিকার দানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারে। এই পদক্ষেপ প্রকাশ্য নোটিশ দানের মাধ্যমে হবে।

বাইরে থেকে আসা যেকোনো ব্যক্তির পরীক্ষা করতে পারে সরকার ও সরকার যদি মনে করেন যেকোনো ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করতে পারে। এই আইন যদি কেউ অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির পরোয়ানা জারি হতে পারে ও জরিমানা হতে পারে।

৩ নং ধারায় এই আইনের বিধি অমান্য করলে শাস্তির বন্দোবস্তও করা হয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ নং ধারায় (সরকারি আধিকারিকের নির্দেশ অমান্য করা) ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

৪ নং ধারায় এই আইন বলবৎকারী আধিকারিকদের আইনি সুরক্ষা দেবার কথা বলা হয়েছে।

এই আইনের প্রয়োগ কখন হয়েছিল?

২০১৮ সালে গুজরাটে এই আইনের আওতায় নোটিফিকেশন জারি করে খেদকর্মাসিয়া গ্রামকে কলেরা অধ্যুষিত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে চণ্ডীগড়ে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির মোকাবিলায় এই আইন প্রয়োগ করা হযেছিল। ২০০৯ সালে পুনেতে সোয়াইন ফ্লু আটকাতে গোটা শহরের সমস্ত হাসপাতালগুলিতে পরীক্ষার জন্য ২ নং ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই আইন লাগু করার কারণ হিসেবে সোমবার নবান্নে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তর ২৪ পরগনার কয়েক জন ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাস রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কিন্তু তারা চিকিৎসায় রাজি হচ্ছেন না। এমনকি জেলাশাসককেও বিরক্ত করছেন। আর সে কারণেই রাজ্যে এই মহামারী সংক্রান্ত আইন লাগু করা হল।