গোলাগুলি না হয়েও কিভাবে এত সেনাকে শহীদ হতে হলো

Madhab Das

Updated on:

নিজস্ব প্রতিবেদন : সীমান্ত এলাকা নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিবাদ বছরের পর বছর ধরে। তবে এই বিবাদ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে শুরু করে। আর যার ফলাফল স্বরূপ গত সোমবার রাতে দেখা যায় লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। যে সংঘাতে শহীদ হন ভারতের ২০ জন সেনা, সংঘাতে প্রাণ হারাতে হয় চীনেরও সেনাকে।

ভারত ও চীনের সংঘাত দীর্ঘদিনের হলেও ইদানীংকালে একসাথে এত সংখ্যক সেনাকে প্রাণ হারাতে হয় নি। দীর্ঘ ৫৮ বছর আগে শেষ বড়োসড়ো সংঘাতের রূপ দেখা গিয়েছিল। সোমবার রাতে সংঘাতের পর প্রথমে জানা যায় ভারতের কর্নেল সন্তোষ বাবু সহ তিনজন শহীদ হয়েছেন। পরে জানা যায় সেদিন রাতের ঘটনায় গুরুতর আঘাত ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে আরও ১৭ জন শহীদ হয়েছেন। সরকারিভাবে ভারতের শহীদ হওয়া মোট ২০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন কেন ভারতীয় সেনাদের হাতিয়ারহীন অবস্থায় বিপদের মুখে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আর এই প্রশ্নের উত্তরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, “গালওয়ান উপত্যকায় যে বাহিনী সংঘাতে জড়ায় তাদের হাতে হাতিয়ার ছিল। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা সব জওয়ানের হাতেই হাতিয়ার থাকে। কিন্তু শর্ত ও প্রোটোকল মেনে তা ব্যবহার করা হয়নি।” এই প্রোটোকলের মূলে রয়েছে চীনের সাথে ভারতের পাঁচটি চুক্তি। তবে এমন চুক্তিতে অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম না থাকলেও প্রাণের আশঙ্কা, ভূখণ্ডের সিকিউরিটি আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে কমান্ডার স্তরের অফিসাররা তাদের বাহিনীকে সমস্ত রকমের অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন। তাহলে কেন সেদিন রাতে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। আর এর পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্ন উঠছে, যা হলো কোনরকম গোলাগুলি ছাড়াই কিভাবে এত সংখ্যক সেনা শহীদ হলেন?

গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল। এই এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে রয়েছে। এই অঞ্চলটি LAC-র পশ্চিম দিক চীনের নিকটে। যদিও ওই এলাকার মালিকাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত। আর এই এলাকাতে ওই খাড়া শৈল প্রবাহের মধ্যেই দুই দেশের সেনারা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। আর সংঘাতের সময় অনেক সেনা খরস্রোতা গালওয়ান নদীতে পড়ে যান। এমনটাই জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে।

চিনা সেনাদের অতর্কিত হানায় ভারতীয় সেনারা আঘাত নিয়ে এই তীব্র ঠাণ্ডায় অনেকেই টিকে থাকতে পারেননি। যে কারণে আমাদের হারাতে হয়েছে এত সংখ্যক ভারতীয় সেনাকে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে চীন সেনাদের ক্ষেত্রেও। এছাড়াও এই এলাকা এতটাই প্রতিকূল যে আহত সেনাদের দ্রুত উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি সেই মুহূর্তে। লাদাখের এই উপত্যকা এলাকায় শীতকালীন তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও এই উচ্চতায় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। তবে সেদিন কেবলমাত্র ভারতীয় সেনারাই শহীদ হয়েছেন এমনটা নয়, মরার আগে ভারতীয় সেনারা তাদের প্রত্যাঘাতে চীনের দুইজন মেজর, দুইজন ক্যাপ্টেন, চারজন লেফট্যানেন্ট কর্নেল ও ৩০-এর বেশি সেনার প্রাণ নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।