Amazon River: বলতে পারবেন আমাজন নদীতে কেন কোন সেতু নেই? উত্তর চমকে দেবার মত

Prosun Kanti Das

Published on:

Advertisements

Amazon River: ইংরেজি সাহিত্য পড়লে সেখানে অবশ্যই উল্লেখ থাকবে ইংল্যান্ডের টেমস নদীর কথা। এই বিখ্যাত সেতু অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে রয়েছে। যার নাম হল ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ। জানেন কি কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ঘুমন্ত লন্ডন শহরকে দেখতেন সেই ব্রিজের উপর থেকে। মায়াবী লন্ডনের রূপ দেখে তিনি যেন অভিভূত হয়ে যেতেন। এই ইংরেজ কবি এই ব্রিজের সঙ্গে সঙ্গে দেখতেন আপন বেগে বয়ে চলা টেমস নদীকে। নদীর শান্ত, সুন্দর রূপ তাকে মুগ্ধ করত। গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত নদীর উপর (Amazon River) গড়ে উঠেছে নানা সেতু, যা নদীর গতিপথকে রুদ্ধ করেছে। নদীর ওপরে সেতু নির্মাণের ফলে নদীর এপার থেকে ওপারে যাত্রা করা সুবিধা হয়েছে। এমনকি সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। সেতু মানে হলো সংযোগ। যোগাযোগ হল দুটি জায়গার মধ্যে যোগাযোগ।

Advertisements

উদাহরণ হিসেবে বলা চলে তিলোত্তমানগরী কলকাতা আর হাওড়া শহরকে জুড়ে রেখেছে রবীন্দ্র সেতু। সবাই যাকে চেনে হাওড়া ব্রিজ নামে। ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল এই ক্যান্টিলিভার ব্রিজটি। পরবর্তীকালে অবশ্য হাওড়া ব্রিজের পাশে হুগলি নদীর উপর গড়ে ওঠে বিদ্যাসাগর সেতু। যার ডাকনাম দ্বিতীয় হুগলি সেতু। এছাড়াও পাশাপাশি রয়েছে বিবেকানন্দ সেতু, ভগিনী নিবেদিতা সেতু। বিশ্বের দীর্ঘতম নীল নদের উপরও রয়েছে ফ্রিডম ব্রিজ, সিক্সথ অক্টোবর ব্রিজের মতো বেশ কয়েকটি সেতু। কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে যে আমাজন নদীর উপর কোনও সেতু নেই। আমাজন পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। তাহলে কেন এই নদীর ওপরে কোন ব্রিজ গড়ে ওঠেনি?

Advertisements

এই প্রশ্নের উত্তর হল ৬ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আমাজন নদীর (Amazon River) অস্থির চলন ও জলপ্রবাহ। আমাজন নদী বয়ে গেছে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়ার উপর দিয়ে। জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে থাকে বর্ষাকাল। স্বাভাবিকভাবে নদীর প্রস্থ বর্ষাকালে অনেকটা বৃদ্ধি পায়। যেমন জানুয়ারিতে নদীর যা প্রস্থ থাকে, বর্ষায় সেই প্রস্থ দশগুণ বেড়ে যায়। জলের গতিবেগ যেমন বেড়ে ওঠে তেমন যেন দুকূল ছাপিয়ে ওঠে এই আমাজন নদী।

Advertisements

এইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলেই এখনো পর্যন্ত কেউ আমাজন নদীতে (Amazon River) সেতু নির্মাণ করার মত দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারেনি। কারণ বর্ষায় তা কাজেই লাগবে না। পাশাপাশি আমাজনের পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটি অত্যন্ত নরম। সেখানে কোনওভাবেই সেতুর পরিকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব হয় না। আবার নদীর জলস্তরের হ্রাস-বৃদ্ধিও অনিয়ন্ত্রিত। এই এলাকাতে গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী কোন কিছু নির্মাণ করা যেমন ব্যয়সাপেক্ষ তেমনি সময়সাপেক্ষ। এমনকি নদী উপত্যকা অঞ্চল সেতু নির্মাণের জন্য উপযুক্ত নয়।

আরও পড়ুন: কবে দেবেন অঞ্জলী? ২রা নাকি ৩রা ফেব্রুয়ারী? সরস্বতী পূজা ঠিক কবে?

সাধারণত যাতায়াতের জন্যই দরকার পড়ে ব্রিজ বা সেতুর। আর আমাজনের দু’পাড়ে বড় শহর বা ঘন জনবসতি নেই। নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকা বেশিরভাগটাই হল গভীর জঙ্গল। আবার, আমাজন উপকূলের যে সমস্ত এলাকায় মোটামুটি জনবসতি দেখা যায়, সেখানে নদী পারাপারের জন্য ব্যবহার করা হয় ফেরির। তাই ব্রিজের প্রয়োজন পড়ে না।

বিশ্বের বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট এর মধ্য দিয়ে আমাজন প্রবাহিত হয়েছে ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। কয়েক লক্ষ প্রাণী ও গাছপালার ঠিকানা ‘পৃথিবীর ফুসফুস’-এ। নগরায়নের ফলে ক্রমশই ধ্বংস হতে চলেছে এখানকার গভীর অরণ্য। লোভ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে মানুষ যেন ধ্বংসের লীলা খেলায় মেতে উঠেছে। যার কুপ্রভাব সরাসরি পড়ছে বিশ্বের জলবায়ুতে। কয়েক বছর আগে আমাজনের জঙ্গলের বিস্তীর্ণ অংশ দাবানলে পুড়ে গিয়েছিল। যদি সেতু নির্মাণের মতো কাজ কখনো শুরু হয় তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হবে। সেতু ও রাস্তা তৈরি করতে গেলে প্রচুর গাছ কাটতে হবে। যা আমাজনের জীববৈচিত্র্যের জন্য মোটেও ভালো কাজ হবে না। এইসব কারণের কথা মাথায় রেখে কখনো আমাজন নদীর উপরে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

Advertisements