নিজস্ব প্রতিবেদন : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সরকারের ফেরার জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডারের (Lakshmir Bhandar) মত প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে রাজ্যের মহিলাদের নগদ টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। অনেকেই মনে করেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বড় জয়ের পিছনে রয়েছে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। পরবর্তীতে তৃণমূল সরকারে ফিরতেই এই প্রকল্প চালু করে।
পশ্চিমবঙ্গের এমন প্রকল্পকে অনুকরণ করে ছত্তিশগড়ে (Chattisgarh) সরকারের ফেরার জন্য কংগ্রেসের তরফ থেকেও মাসে মাসে ১৫০০০ টাকা মহিলাদের অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বঘেল। এছাড়াও সরকারে ফেরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছিল তাকে। বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য কৃষি ঋণ মুকুব, ২০০ ইউনিট বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, ধানের দাম কুইন্টাল প্রতি ৩২০০ টাকা করা, গ্যাস সিলিন্ডারে ৫০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া ইত্যাদি একের পর এক ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও সরকারে প্রত্যাবর্তন করতে ব্যর্থ হল কংগ্রেস। সরকারের প্রত্যাবর্তন করতে কংগ্রেসের ব্যর্থতার পিছনে রয়েছে ‘মহাদেব’ সহ পাঁচটি কারণ।
১) ছত্তিশগড়ে ভূপেশ বঘেলের নেতৃত্বে কংগ্রেস প্রত্যাবর্তন করতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে যা মনে করা হচ্ছে তা হলো ‘মহাদেব বেটিং অ্যাপ’। ৩ নভেম্বর ইডি দাবি করে, নির্বাচনে কংগ্রেসের খরচ যোগানোর জন্য মহাদেব অ্যাপের মালিকেরা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে অসীম দাস নামে এক ব্যক্তিকে পাঠানো হয় এবং তাকে ইডি গ্রেফতার করে ভিলাই থেকে। এমনকি সেই সময় ইডি দাবি করে, বঘেল নামের এক রাজনীতিকে ৫ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছিল। এরপরই ভোট প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয় বিজেপি।
পরবর্তীতে এই বেটিং অ্যাপের মালিক শুভম সোনি সংযুক্ত আরব আমির শাহী থেকে একটি ভিডিও বার্তায় বঘেল নামে ওই রাজনীতিকের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন। এই স্বীকারোক্তির পরেই বিজেপির তরফ থেকে আক্রমণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন কংগ্রেসের পরাজয়ের পিছনে এই মহাদেব বেটিং অ্যাপ অনেকখানি দায়ী।
২) ভূপেশ বঘেলের বিরুদ্ধে এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপি বিভিন্ন দিক দিয়ে সড়ক হলেও বঘেল কিন্তু সেই ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার সুযোগই পান নি। বিজেপির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এনে অস্ত্রে শান দেওয়ার মতো সুযোগই ছিল না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের বড় অংশ।
৩) ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের এইভাবে ধরাশায়ী হওয়ার পিছনে মহাদেব বেটিং অ্যাপের মতোই রয়েছে মাওবাদী ইস্যু। রাজনৈতিক মহলের বড় অংশ মনে করছেন, মাওবাদী দমনে কংগ্রেসের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়। আর এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপি রীতিমতো প্রমাণ করতে উঠে পড়ে নামে যে, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলেই মাওবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বেড়ে যায়।
৪) ছত্তিশগড়ে বিজেপির জয়ের পিছনে একটি বড় কারণ হলো ধর্মান্তরের বিরুদ্ধে সরব হওয়া। সংঘ পরিবার বহুদিন থেকেই চাইছে, ধর্মান্তর ঠেকানোর জন্য জাতীয় স্তরে একটি কড়া আইন। ছত্তিশগড়ে এমন ধর্মান্তরের ভুরিভুরি অভিযোগ থাকলেও তা ঠেকানোর জন্য কংগ্রেসকে তেমন সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
৫) ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের ভোটে ভাগ বসায় ৩টি নতুন দল। এখানে কংগ্রেসের ভোটে ভাগ বসিয়েছে জনতা কংগ্রেস ছত্তিশগড়, হামার রাজ পার্টি এবং সর্ব আদি দল। এগুলির কোনটি খ্রিস্টান আবার কোনটি আদিবাসীদের নিয়ে তৈরি।