Railway line: ২০০ কিমি গতিতে ছুটলেও লাইনচ্যুত হবে না ট্রেন, রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এই মুহূর্তে ভারতীয় রেলওয়ের কিছুটা খারাপ সময় চলছে তা বলাই যায়। কারণ, একের পর এক ঘটেছে রেল দুর্ঘটনা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় রেলওয়ের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। রেল দুর্ঘটনা ঘটছে ঠিকই কিন্তু তা বলে সব ট্রেনই কি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে? তা কিন্তু নয়। কখনো ভেবে দেখেছেন একটা সরু মসৃণ রেললাইন (Railway line) পাতের উপর দিয়ে কিভাবে এত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ট্রেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই বৈজ্ঞানিক কারণটি।
স্থলপথে যে সমস্ত যানবাহন চলে তার মধ্যে রেল একটু অন্যরকম। রাস্তা খারাপ থাকলে সেই রাস্তার উপর দিয়ে গাড়ি চালানো কতটা সমস্যা জানক তা আমরা সবাই কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারি। বাস, গাড়ি বা বাইক যাতে করেই যাতায়াত করি না কেন সমস্যায় পড়তে হয় সকল যাত্রীকেই। যাত্রীদের অসুবিধা তো হয়ই, তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাড়িটিও। বর্ষার সময়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। পিচের রাস্তার উপরে বর্ষার সময় চলাচল করতে গেল অনেক সময় গাড়ির পিছলে যাবার ঘটনা ঘটে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন ট্রেনের ক্ষেত্রে এই পিছলে পড়ার সমস্যা হয় না কেন? ট্রেনতো রাস্তায় চলে না, চলে একটি মসৃণ লোহার পাতের উপর দিয়ে। নির্দিষ্ট ট্র্যাকে (Railway line) সাধারণ গাড়ির তুলনায় কয়েকশো গুণ বেশি দ্রুত গতিতে চললেও লাইনচ্যুত হবার ভয় নেই। কিন্তু কেন? এর পিছনে কারণটা ঠিক কি?
মসৃণ ট্র্যাকের উপর দিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে ট্রেন চালালেও লাইনচ্যুত হবার সম্ভাবনা নেই। এর পিছনে রয়েছে একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক কারণ। শুধু লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাই নয়, ট্রেন কখনো এক লাইন (Railway line) থেকে অন্য লাইনে চলে যেতেও পারে না চালকের হস্তক্ষেপ ছাড়া। এর পিছনে রয়েছে যুক্তিযুক্ত বৈজ্ঞানিক কারণ। আসলে ট্রেন মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে চলে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, ঘর্ষণ বল এবং যান্ত্রিক শক্তি। ট্রেন লাইনচ্যুত না হওয়ার পিছনের মূল কারণ হলো ঘর্ষণ বল। এছাড়াও ট্রেনের দুটি চাকার মধ্যে সব সময় একই দূরত্বে বজায় থাকে। এর কারনেও লাইনচ্যুত হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই কমে যায়।
আরো পড়ুন: দূরপাল্লার ট্রেনে এবার মিলবে আরও বেশি আরাম, বেডরোলে বদল আনছে ভারতীয় রেল
রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন এবং ট্রেনের মধ্যে গতিবেগের পার্থক্য অনেকটাই। কিন্তু ট্রেনের গতিবেগ কতটা বাড়ানো যাবে সেই নিয়মটা অনেকটা এক। সাধারণত যে সমস্ত গাড়িগুলি রাস্তায় চলে সেগুলির সর্বোচ্চ গতিবেগে গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই। গতিবেগ কিছুটা কমিয়েই গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ট্রেনের ক্ষেত্রেও নিয়মটা একদম তাই। একটি ট্রেন যে গতিতে চলতে পারে সেই গতিতে কখনোই সেটিকে চালানো যায় না। ট্রেনের গতি ন্যূনতম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়ে চালাতে হয়। এছাড়াও ছোট অলিগলির রাস্তায় যেমন বড় লরি বা বাস চলাচল করতে পারে না, ঠিক একইভাবে যেকোনো ট্র্যাকের উপর দিয়ে যে কোন ট্রেন চালিয়ে নেওয়া যায় না। লোকাল ট্রেনের লাইনের উপর দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি নাও চলাচল করতে পারে। উচ্চগতির ট্রেনের জন্য আলাদা রেল লাইনের (Railway line) ব্যবস্থা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযুক্তি যুক্ত রেল লাইন পাতার ব্যবস্থাও করতে হয়।
বিপদ এড়াতে প্রতিদিন রেল লাইনের (Railway line) ট্র্যাক চেক করা হয় রেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। যাতে কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে তা তৎক্ষণাৎ নির্ধারণ করা এবং সমাধান করা সম্ভব হয়। এমনকি ট্রেন চালানোর জন্য আলাদাভাবে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় চালককে। বিশেষত উচ্চগতির ট্রেন চালানোর জন্য আলাদাভাবে ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বিপদ বলে কয়ে আসে না। আমাদের দুর্ভাগ্য এত সাবধানতা অবলম্বন করার পরও, এত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরও প্রতিনিয়ত খবর আসে ট্রেন দুর্ঘটনার। ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারন মানুষ। একটি ট্রেন বিপদে পরা মানে একজন দুজন মানুষের ক্ষতি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হন একসঙ্গে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। তাই ট্রেনের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরো অনেক মজবুত করার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। যাত্রীর সুবিধা এবং সুরক্ষার কথা চিন্তা করে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন প্রকল্প নিয়ে আসছে রেল কর্তৃপক্ষ।