নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়। কিন্তু সে স্বাধীনতা আসে দেশ ভাগের মধ্যে দিয়ে। যদিও দেশভাগের সূত্রপাত হয় ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের মধ্যে দিয়ে। সেই দেশ ভাগের সবচেয়ে বেশি মূল্য চোকাতে হয় বাংলাকে। হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি জাতি হিসাবে পরিচিত লাভ করলেও ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয় অখন্ড বাংলা।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ জিন্নার কৌশলে পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। যদিও তা রোধ করা সম্ভব হয়। যাদের দ্বারা এ সম্ভব হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হেমন্ত কুমার সরকার, নলীনাক্ষ সান্যাল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, সুবোধ চন্দ্রের মতো ব্যক্তিরা। ১৯৪৬ সালে বেঙ্গল পার্টিশন লিগ স্থাপন করা হয়। যা পরে বেঙ্গল প্রভেনসিয়াল কনফারেন্সে নাম হয়। যাদের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে আলাদা বাংলা স্থাপন। ১৯৪৬ সালের ২৯ মার্চ, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমানের মহারাজা, উদয় চাঁদ মহাতাব, পি এন সিনহা রায়, কাশিম বাজারের মহারাজ শিরিস চন্দ্র নন্দী, মতো ব্যক্তিরা হিন্দুদের জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি তোলেন।
সেই সময়েই ‘অখন্ড বাংলার’ দাবি তোলেন শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শঙ্কর রায়, ফজলুর রহমান, আবুল হাসিম, সুরাবরদী মতো ব্যক্তিরা। মুসলিম লিগ নেতা আবুল হাফিস ১৬ জন মুসলিম সদস্য ও ১৪ জন হিন্দু সদস্য নিয়ে সার্বভৌম বাংলা গঠনের পরিকল্পনা করেন। যদিও জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগ সমগ্ৰ আসাম ও বাংলার দাবি করেন পাকিস্তানের জন্য।
শ্যামাপ্রসাদের দাবি ছিল, ১. ভারত পাকিস্তানের পুনর্মিলন হোক, ২. দুই দেশের ভিতর সংখ্যালঘু বিনিময়, ৩. ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা। যদিও এই দাবিগুলো মেটেনি তবু শ্যামাপ্রসাদ হিন্দু বাংলাকে অখন্ড বাংলা বা পাকিস্তানের হাত থেকে বার করতে সমর্থ হন।
১৯৪৭ সালের ২০ জুন বাংলার বিধানসভায় হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গঠনের প্রস্তাব পাস হয়। শ্যামাপ্রসাদ বলেন, “যদি ২৫ শতাংশ মুসলিম ভারতে থাকতে না পারে, তাহলে ৪৪ শতাংশ হিন্দু ৫৪ শতাংশ মুসলিম বাংলার নেতৃত্বে থাকতে পারবে।”
র্যাডক্লিফ মাত্র এক মাসের সময়ে বাংলাকে ভাগ করেন। যদিও তাঁর বাংলা সম্বন্ধে কোন ধারণা ছিল না। তাঁর হাত ধরেই বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলা যায় পাকিস্তানের হাতে, খুলনা আসে ভারতের হাতে, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্ৰাম চলে যায় পাকিস্তানের হাতে। কিন্তু অচিরেই ভুল সংশোধন করে এই অংশগুলো ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশ্য হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ খুলনা ও চট্টগ্ৰামকে ছাড়তে হয় পাকিস্তানকে। সীমান্ত জটিলতায় স্বাধীনতার বেশ কয়েকদিন পর ভারতের স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে বাংলার বেশ কয়েকটি জেলা, গ্ৰাম ও ছিটমহল এলাকাগুলোতে।
মালদার রাতুয়া, ইংলিশ বাজার, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট, নদীয়ার সিবানীবাসের, কিসানগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদীয়ার মতো জেলাগুলোতে ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্টে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ে।
নদীয়ার শান্তিপুর, কল্যাণী, বনগাঁ, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর, শেখরপুর, করিমপুর, মেহেরপুর, কুস্টিয়া, চুয়াডাঙা, রানাঘাট এই সকল জায়গাগুলোতে ১৫ আগস্টের পর ভারতের পতাকা ওড়ে।
জলপাইগুড়ি ও দিনাজপুরের বেশ কিছু অংশ পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়। যা পরে ভারতের মধ্যে ফিরে আসে। আজও এই সব এলাকাগুলোতে ১৫ আগস্ট নয় স্বাধীনতা পালন করা হয় বেশ কয়েকদিন পর।