‘মেয়েরা করলেই দোষ’, বহুগামিতা নিয়ে পুরুষদের টেনে নেটিজেনদের ধুয়ে দিলেন তসলিমা

Shyamali Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা টেনে লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে একাধিকবার স্রোতের উল্টো পথে বেয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে। আর এবারও তিনি সরব যখন সোশ্যাল মিডিয়া মেতে উঠেছে অভিনেত্রী সাংসদ নুসরত জাহানকে নিয়ে। নুসরতের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলে তাসলিমা নাসরিন বেশ কিছু উদাহরণ তুলে একপ্রকার তার পাশেই দাঁড়ান।

Advertisements

তবে শুধু নুসরত নন, এর আগেও এমন ঘটনা টলিউডের একাধিক অভিনেত্রী যেমন শ্রাবন্তী সহ অন্যান্যদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গিয়েছে। তাদের এই বহুগামিতা নিয়ে নেটিজেনরা বেশ কৌতূহল। শুধু কৌতুহলই না, পাশাপাশি তারা তাদের এই সকল ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানান কটূক্তিও করে থাকেন। আর এই নিয়েই এবার সরব হলেন লেখিকা। তার কথায়, ‘মেয়েরা করলেই দোষ’!

Advertisements

আসলে তা নয়, লেখিকা মূলত নারী-পুরুষ সকলের বহুগামিতার ক্ষেত্রেই সরব হয়েছেন। তবে তা হলেও সমাজে নারী পুরুষ দুই ক্ষেত্রে দু’ধরনের যে ছিঃ ছিঃ রব লক্ষ্য করা যায় তাই প্রশ্ন-উত্তর আকারে তিনি তার লেখনীতে তুলে ধরেছেন। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই সরব হওয়ার সময় একাধিক বিশিষ্টজনদের প্রসঙ্গও তুলে ধরতে ছাড়েননি তিনি। উত্তম কুমার থেকে সমরেশ বসুর মতো ব্যক্তিদেরও উদাহরণের তালিকায় রেখেছেন লেখিকা।

Advertisements

ঠিকই লিখেছেন লেখিকা? লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন,

“– বহুগামিতা একেবারেই মানতে পারি না।

— মেয়েদের?

–শুধু মেয়েদের হবে কেন, পুরুষদেরও।

–কোনও পুরুষ বহুগামী, এমন খবর শুনলে এমন ছিঃ ছিঃ রব শোনা যায় না তো!

–আলবৎ শোনা যায়।

–একটা উদাহরণ দাও তো।

–এভাবে উদাহরণ দেওয়া যায় না কি?

–খুব যায়। শিল্প সাহিত্য নাটক সিনেমার জগতে যে পুরুষ বহুগামী নয়, এমন কয়েকজনের নাম বলো। অথবা যে কজন বহুগামী, তাদেরই নাম বলো।
–কী বলতে চাইছো?

–বলতে চাইছি, যে পুরুষেরা বহুগামী, তাদের বিরুদ্ধে তুমি কি সরব?
–নিশ্চয়ই।

–তুমি তো উত্তম কুমার বলতে অজ্ঞান। উনি তো গৌরী দেবী এবং সুপ্রিয়া দেবী দুজনের সঙ্গে থাকতেন। একসময় গৌরী দেবীকে ছেড়ে সুপ্রিয়া দেবীকে বিয়ে না করেই স্বামী স্ত্রীর মতোই থাকা শুরু করলেন। তুমি তো উত্তম কুমারকে গালি দাও না। তুমি তো সমরেশ বসুরও নিন্দে করো না, উনি তো দু’বোনকে বিয়ে করেছিলেন। প্রখ্যাত বহুগামী রবিশংকরকে নিয়েও তো কিছু বলো না!
–একজনকে ছেড়ে আরেকজনকে নিয়ে থেকেছেন, একে তো বহুগামিতা বলে না।
–তাহলে যে মেয়েটির নিন্দে করছো, সেও তো একজনকে ছেড়ে আরেকজনকে নিয়ে থেকেছে। যা করেছে প্রকাশ্যে, লুকিয়ে নয়, কাউকে ঠকিয়ে নয়। তাহলে তার নিন্দে করছো কেন।

–সমরেশ বসু বা উত্তর কুমার বা রবিশংকর অনেক বড়, এত বড়’র সঙ্গে কোথাকার কে, তার তুলনা চলে না।
–বড় হলে বুঝি অনৈতিক কাজ করা যায়? আর কোথাকার কে’দের জন্যই নীতি? নাকি শুধু মেয়েদের বেলায় নীতির প্রশ্ন ওঠে?

–বাজে কথা হচ্ছে। আমি নারী -পুরুষকে আলাদা করে দেখিনা।

— তাহলে শুধু মেয়েদের পতিতালয় কেন, পুরুষদের পতিতলয় কেন নেই– এই প্রশ্ন কোনওদিন করেছো? বাই দ্যা ওয়ে, পতিতালয়কে যে আইনত বৈধ করা হয়েছে , তার বিরুদ্ধে কিছু বলো না কেন?

–কেন বলবো, পতিতালয় তো থাকা উচিত। আছে বলেই তো সমাজে ধর্ষণ কম হয়।

–হা হা হা। তাই বুঝি?

–হ্যাঁ তাই।

–তোমাদের বৈধ পতিতালয় তো বিবাহিত, অবিবাহিত সব পুরুষের জন্য। পতিতালয়ের গেটে তো ‘শুধু অবিবাহিত পুরুষ অ্যালাউড’ লেখা সাইনবোর্ড নেই। বিবাহিত পুরুষেরা যারা সেখানে যাচ্ছে, তারা তো বহুগামিতা করছে। করছে না? বৈধ ভাবেই করছে। সে ক্ষেত্রে তো পুরুষের বহুগামিতা বৈধ।
–শুধু খারাপ লোকেরা যায় ওসব জায়গায়।

–তাহলে বলতে চাইছো খারাপ লোকদের জন্য বহুগামিতা ঠিক, শুধু ভালো লোকদের জন্য ঠিক নয়?
–আমি তা বলতে চাইছি না, বহুগামিতা ব্যাপারটাই খারাপ।

–তাহলে পতিতালয়ে বিবাহিত পুরুষদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথা কোথাও মুখ ফুটে বলো না কেন?

–আমি বললে কে শুনবে।
–কিন্তু তুমি যে একটি মেয়ের বহুগামিতার বিরুদ্ধে চিৎকার করছো, ও তো অনেকে শুনছে।

–মেয়েদের এসব সহ্য করা যায় না।
–এই তো আসল কথা পাড়লে। মেয়েদের বহুগামিতা সহ্য করা যায় না, পুরুষদের বহুগামিতা সহ্য করা যায়।

–পুরুষ আর নারীর শরীর তো এক নয়, পার্থক্য আছে। হরমোনের পার্থক্য। পুরুষদের সেক্সটা বেশি দরকার হয়।

–এতক্ষণে অরিন্দম! মনের কথাটি আগে বলে ফেললেই পারতে। বলো যে পুরুষের বহুগামী হওয়ার অধিকার আছে, যেহেতু তাদের হরমোন বেশি সেক্স চায়, এক নারীতে তা মেটে না। কিন্তু নারীর বহুগামী হওয়ার কোনও অধিকার নেই। নারীকে একগামী হতে হবে।

–আমাদের মায়েরা কি কল্পনা করতে পারতো স্বামী ছাড়া অন্য কারও দিকে কোনওদিন তাকাবে?

–তুমি চাইছো দুনিয়ার সব মেয়ে তোমাদের মায়ের মতো হোক।

–তা তো হয়নি, চারদিকে সব চরিত্রহীন বহুগামী মেয়ে।

–চারদিকে কি চরিত্রহীন বহুগামী পুরুষ নেই?

–উফ এসব শুনতে আর ভালো লাগছে না।”

Advertisements