প্রসূন দাস : করোনা প্রকোপ ঠেকানোর জন্য ভ্যাক্সিনেশনকেই আসল অস্ত্র বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তবে এই ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে এখনও অনেক জায়গাতেই রয়েছে অনীহা। অনেকে ভয় ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন আবার অনেক জায়গায় ইচ্ছে থাকলেও রয়েছে চাহিদার অভাব। তবে এমন পরিস্থিতিতেই বীরভূমের নানুরের পাপুড়ি গ্রাম এমন এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলো যা জেলার ক্ষেত্রে তো নজির, রাজ্যেও নজির তৈরি করার দাবি রাখে।
বীরভূমের নানুরের মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামের ১০০% মানুষ হয় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ অথবা দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ফেলেছেন। এমনটাই জানা যাচ্ছে বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী। আগামী দিনে এই জেলাকেই সামনে রেখে অন্যান্য জেলাতে এমন নজির তৈরি করার কাজ চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে জেলার স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের তরফ থেকে।
বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে ডেপুটি সিএমওএইচ ৩ ডাঃ জয়ন্ত সুকুল জানিয়েছেন, “ভ্যাক্সিনেশন শুরু হওয়ার সময় থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি মানুষকে অন্ততপক্ষে একটি করে ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছিলাম না। কিন্তু এই গ্রামের নেতৃত্ব স্থানীয়দের সহযোগিতায় এই সফলতা পাওয়া গেল। বর্তমানে এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ অন্ততপক্ষে ভ্যাকসিনের একটি করে ডোজ নিয়ে ফেলেছেন।”
কিন্তু কীভাবে এই লক্ষ্য পূরণ?
স্থানীয় তৃণমূল নেতা কাজল শেখ জানিয়েছেন, “এই গ্রামটা হলো মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। আমি অন্যান্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে লক্ষ্য করেছি, সেখানে যে সকল মানুষেরা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাদের অধিকাংশই আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনেরা। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নেই বললেই চলে। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই অন্ততপক্ষে এই গ্রামের ১০০% মানুষকে ভ্যাক্সিনেশন করাবো। আর এই লক্ষ্য নিয়ে আমি আমার গর্ভধারিনী মাকে প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া করাই, তারপর এখন গ্রামের সকলেই ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলেছেন।”
নানুরের পাপুড়ি গ্রামে মোট ৫০০০ বাসিন্দা রয়েছেন যারা আঠারোর্দ্ধ। যাদের মধ্যে ২০০ জন রয়েছেন যারা বাইরে কাজ করেন। অর্থাৎ ৪৮০০ জন বর্তমানে গ্রামের বাসিন্দা। এই বাসিন্দাদের প্রত্যেকেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়ে নিয়েছেন। বাকি যারা বাইরে কর্মরত রয়েছেন তারা গ্রামে ফিরলে প্রথমে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে এবং ভ্যাক্সিনেশন করে গ্রামে ঢোকানো হবে বলে জানিয়েছেন কাজল শেখ।