নিজস্ব প্রতিবেদন : পরিবারে এসেছে নতুন সদস্য। নতুন সদস্য এলেই সবার মন আনন্দে ভরে ওঠে। একবার চোখে দেখার, ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন সবার থাকে। বিশেষ করে সে যখন বাবা। তবে এখন এসবের ফুরসৎ নেই, কারণ দেশ আজ যে বিপদের সম্মুখীন। আগে দেশকে বাঁচাতে হবে, স্মার্ট ফোনে সন্তানের ছবি দেখেই মন ভোলাচ্ছেন এক কনস্টেবল।
পুরো বিশ্বে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রামিতদের সংখ্যা। করোনা নামক এক গভীর অসুখের থাবা আমাদের এই দেশ তথা ভারতবর্ষের উপরও পড়েছে। ভারতবর্ষের মধ্যে শুধু উত্তর প্রদেশকে ধরলেই দেখতে পাবো সেখানে করোনাতে সংক্রামিতদের সংখ্যা ৬৫৭। মারা গেছেন ৫ জন। ওখানকার বদাউন জেলার ১৪টি গ্রাম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। যথারীতি হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর যা হয় ঐ গ্রামগুলিতে কারোর যাওয়া অথবা আসা পুরো বন্ধ। গ্রামগুলিতে করে দেওয়া হয়েছে সিল।
আসলে ওইখানেই একজন ব্যক্তির কোভিড ১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। আর এরপরই ওই গ্রাম ও তার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১৪টি গ্রামকেই সিল করা হয়। এই চোদ্দটি গ্রামের বাসিন্দাই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। জরুরি পরিষেবা পাচ্ছেন পুলিশ প্রশাসনের মারফৎ। এরকম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কনস্টেবল রামকান্ত বাবুও পারেন নি নিজের কথা ভাবতে। দেশের কথা ভেবে কাজ করছেন তিনি। উত্তর প্রদেশের নানা প্রান্তে ঘুরেই তাকে ডিউটি করতে হয়। তাই আজ তার কাছে তার কর্মজীবন – কতর্ব্য – দেশ এগুলিই আগে জায়গা পেয়েছে। যদি ডাক্তাররা পারেন তিনি কেন পারবেন না! তাই সদ্য জন্মানো সন্তানের মুখ দেখতেও তিনি গ্রামে ফেরেন নি। সন্তানের মুখ দেখেছেন মোবাইলের মাধ্যমেই। বছর পঁচিশের রামকান্ত নাগর ১২ দিন আগে বাবা হয়েছেন। ঘরে তার ফুটফুটে মেয়ে আর এদিকে তার কতর্ব্য- তার দেশসেবা।দেশসেবাকেই বেছে নিলেন তিনি। সচেতনতা বাড়ানো, টহল দেওয়ার কাজে তিনি এখন ব্যস্ত। লকডাউন মানা হচ্ছে কি না! হটস্পট এলাকাগুলিতে প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছালো কিনা! এইসব কাজে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। মন তার যতই ঘরপানে ছুটুক তার কাজই তো তার পরিচয়।
রামকান্তের পোস্টিং হয়েছে ইটাওয়াতে। এই জায়গাতেই কোভিড-১৯ এর একটা পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া রাজ্যের আরও ১৫০টি সংক্রামিত এলাকাতেও ডিউটি করেন রামকান্ত বাবু। ঐ সব এলাকার লোকজন যাতে বাইরে না যান আর বহিরাগতরাও যাতে ঐ এলাকাতে প্রবেশ না করতে পারে সেই দিকটাও দেখতে হয় রামাকান্ত বাবুকে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভে ও স্ক্রিনিং করেন তিনি। এজন্যই স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি টাস্ক ফোর্সও। সবেতেই পুলিশের উপস্থিতি দরকার। আর তিনি কী করেই বা দেশের এই দুর্দিনে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবেন!
রামাকান্তের কথায়, “সন্তান জন্মের খবর পাওয়ার পরই ঠিক করেছিলাম গ্রামে যাবো মেয়ের মুখ দেখত। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম এটা ঠিক হবে না। এখানে আমার অনান্য সহকর্মীরাও আছেন। তারাও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। এ ছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই এই কঠিন সময়ে পরিবার ছেড়ে রোগীদের সেবা করছেন দেশের কথা ভেবে। আর তারপর মনে হয়নি গ্রামে যাওয়ার কথা। দেশের এই দুঃসময় আগে কাটুক, তারপর পরিবারের কাছে ফেরা যাবে।”
যেসকল মানুষ এখন দেশের সেবায় রত তাদের জন্য আমাদের টিমের তরফ থেকে রইলো শ্রদ্ধা। আপনাদের জন্যই আমরা সুরক্ষিত।আপনাদের জন্য আমরা গর্ব অনুভব করি।