নিজস্ব প্রতিবেদন : কথামতো মঙ্গলবার পদত্যাগ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। রবিবারে তিনি নিজের পদ থেকে ইস্তাফা দেবেন এমনটাই জানিয়ে ছিলেন। সেই মতো সোমবার তার হাতে যে সকল মামলা ছিল সেগুলি ছেড়ে দেন। তবে তার রায় থেকে যারা উপকৃত হয়েছিলেন তারা কোনভাবেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এইভাবে পদত্যাগ গ্রহণ মেনে নিতে পারছেন না।
নিয়ম অনুযায়ী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পদত্যাগ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই পদত্যাগ পত্র যাবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছেও। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যতদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচার ব্যবস্থার উপর কাজ চালিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে বহু চাকরি প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরা ন্যায় বিচার পেয়েছেন।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিভিন্ন মামলার রায় দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে নানাভাবে বিঁধেছেন। কখনো কখনো তার মুখ থেকে নানান ধরনের ডায়লগ বেরিয়ে এসেছে যেগুলি তার কর্মজীবনকে সবসময় রাজ্যের বাসিন্দাদের মনে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে থাকবে। চলুন আজ আমরা দেখে নেব অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেরা ১০টি ডায়লগ (10 famous dialogues of Justice Abhijit Gangopadhyay)।
১) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল ‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব’। ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিতে গিয়ে বিচারপতি এমন কথা বলেছিলেন।
২) নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘দুর্নীতির মহাসমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। আপনারা (আইনজীবীরা) সাহায্য করছেন। তার পরও হাবুডুবু খাচ্ছি। ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।’ তিনি এমনটা বলেছিলেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে।
৩) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলাতেই। নবম দশম শ্রেণীতে শিক্ষক নিয়োগের মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন ‘অনেক ধেড়ে ইঁদুর বেরোবে’।
৪) ‘এক জ্যাঠামশাই বলে বেড়াচ্ছেন আমি আইনের এবিসিডি জানি না। তিনি নিজে কি এবিসিডি জানেন?’ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মন্তব্য করে খোঁচা দিয়েছিলেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষকে। যদিও মন্তব্য করার ক্ষেত্রে তিনি তার নাম মুখে আনেননি।
৫) রাজ্যের শাসক দলের মুখপাত্র এবং নেতাকর্মীদেরও তিনি ছাড়েননি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু দালাল, যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি আমি, যাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না’। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বেআইনিভাবে যারা চাকরি পেয়েছিলেন তাদের চাকরি খারিজ করার পরিপ্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
৬) একাধিকবার রাজ্যের আইন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করলেও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাও করেছেন বিভিন্ন সময়। ‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। আমি কেন খারাপ কথা বলব?’ এমন মন্তব্য তিনি করেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন ? Justice Abhijit Gangopadhyay: শুধু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নন, এই ৩ বিচারপতিও বেছে নিয়েছিলেন রাজনীতি
৭) আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়েও কিন্তু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তুলোধোনা করতে ছাড়েন নি। কবিতার প্রথম লাইন হল ‘এপাং ওপাং ঝপাং আমরা সবাই ড্যাং ড্যাং’। এই যদি কবিতার বই হয়, তাহলে কেউ পড়বে? আমার মনে হয় কেউ পড়বে না। এই অখাদ্য জিনিসগুলো গ্রন্থাগারে রাখবেন না, এটা আজ বলার সময় এসেছে। অখাদ্য বই সরবরাহ হয় সরকারি গ্রন্থাগারে, তা পড়তে কোনও মনুষ্য সন্তান সেখানে যাবে না।
৮) সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘কুণাল ঘোষকে আমার প্রণাম। উনি এত বড় ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা জানা ছিল না’। অনেকেই রয়েছেন যারা এই বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে নিয়েছিলেন।
৯) ‘নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এক অভিনেত্রীর নাম উঠে এসেছে। আমি শুনেছি, তিনি না কি তিনটি ফ্ল্যাট ভেঙে একটা বড় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জানতে চাই, কে তিনি?’ নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের মামলায় শুনানির সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এমন মন্তব্য করেন।
১০) প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুনানির সময় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল, ‘বোমা বাঁধতে পারলে কি বাড়তি নম্বর পাওয়া যায়? বীরভূমে পেটো বাঁধলে কত নম্বর পাওয়া যায়’?