যোগ্যতা থাকলেও নেতাজি পান নি ভারতরত্ন, পিছনে রয়েছে এই কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতে প্রথম ‘ভারতরত্ন’ উপাধি প্রদান শুরু হয় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর হাতে। ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারী ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ শুরু করেন এই উপাধি প্রদান করা। প্রথমদিকে এই ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দান করা হতো বিজ্ঞান, কলা, সাহিত্যের সম্মানীয় ব্যক্তিদের। তবে পরবর্তীতে এই ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয় মানবিক কৃতিত্বের ব্যক্তিদের। তবে সেই হিসেবে কেন ‘ভারতরত্ন’ উপাধি থেকে বঞ্চিত হলো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু? এর পিছনে রয়েছে এক বিরাট কারণ। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

‘ভারতরত্ন’ পদকের গঠন

‘ভারতরত্ন’ পুরস্কার বা উপাধির বর্তমান পদক তামা দিয়ে তৈরি বট পাতার মতো দেখতে। এই পদকের সামনের অংশে মাঝখানে প্লাটিনাম দিয়ে তৈরি সূর্যের ছবি থাকে এবং পিছনে থাকে ভারতের জাতীয় প্রতীক। তার সাথে নিচে লেখা থাকে ‘সত্যমেব জয়তে’। এছাড়া বর্তমানে ‘ভারতরত্ন’-এর পদকে সূর্যের ছবির নীচে রুপোর গিলটিতে খোদিত থাকে ভারতরত্ন লেখা। এছাড়া, বর্তমানের এই পদক লম্বায় রয়েছে ৫৯ মিলিমিটার, চওড়ায় রয়েছে ৪৮ মিলিমিটার এবং প্রস্থ রয়েছে ৩ মিলিমিটার। তবে আগেকার ‘ভারতরত্ন’-এর পদক দেওয়া হতো গোল সোনার। পূর্বের সেই সোনার পদকে উপরে রুপোর গিলটিতে লেখা থাকত ‘ভারতরত্ন’, মাঝখানে থাকতো সূর্যের ছবি আর নীচে থাকতো পুষ্পহার খোদিত।

‘ভারতরত্ন’ সম্মানের মূল্য

‘ভারতরত্ন’ উপাধি যেসব সম্মানীয় ব্যক্তিরা পান তাদের এই ভারতরত্ন পুরস্কারের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। তবে কোনো অর্থ প্রদান করা হয় না। এই পুরস্কার হিসেবে সম্মানীয় ব্যক্তিরা রাষ্ট্রপতির সই করা একটি প্রমাণ পত্র পান। তার সাথে একটি পদক পান। আর সেই পদকের মূল্য প্রায় ২ লক্ষ টাকার বেশি। এছাড়া ‘ভারতরত্ন’ উপাধি প্রাপ্য ব্যক্তিরা এয়ার ইন্ডিয়া ও রেলে বিনামূল্যে প্রথম শ্রেণীর যাত্রার সুবিধা পান। এছাড়া কোনো ইনকাম ট্যাক্সও তাদের দিতে হয় না।

‘ভারতরত্ন’ উপাধি থেকে বঞ্চিত নেতাজি

প্রথমে ‘ভারতরত্ন’ উপাধি প্রদান করা হতো জীবিত সম্মানীয় ব্যক্তিদের। তবে তার এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৫ সাল থেকে মরণোত্তর ব্যক্তিদেরও ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়ার নিয়ম চালু হয়। সেই হিসেবে ১৯৯২ সালে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল নেতাজিকে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই ‘ভারতরত্ন’ সম্মান থেকে বঞ্চিত হন নেতাজি। সেই ‘ভারতরত্ন’ উপাধি ফিরিয়েও নেওয়া হয়েছিল নেতাজির থেকে। কারণ হিসেবে জানা যায়, নেতাজির মৃত্যু নিয়ে নানান বিবাদ সৃষ্টি হয় সর্বত্র। তাঁর মৃত্যুর প্রমাণ না পাওয়ায় ‘ভারতরত্ন’ উপাধি প্রথম মরণোত্তর ব্যক্তি হিসেবে নেতাজিকে দেওয়া হলেও তা পরবর্তীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেওয়ার নির্দিষ্ট দিন

প্রথম থেকে এখনো পর্যন্ত এই ভারতরত্ন উপাধি পেয়েছে প্রায় ৪৫ জন ব্যক্তি। এই উপাধি যে শুধু ভারতীয়রা পায় তা নয়, ভারতের বাইরে বিদেশীরাও এই উপাধি পায়। ২৬ জানুয়ারি এই পুরস্কার দেওয়া হয় মানবিক কৃতিত্বের ব্যক্তিদের। তবে এই ৪৫ জনের মধ্যে মরণোত্তর উপাধি পান প্রায় ১২ জন। ১৯৫৪ সালে মরণোত্তর উপাধি দেওয়ার নিয়ম ছিল না। তার এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে সেই নিয়ম শুরু হয়। সেই নিয়ম হিসেবে প্রথম মরণোত্তর উপাধি গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। এছাড়া ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয় শচীন তেন্ডুলকারকে। যিনি এই ৪৫ জন ব্যক্তির মধ্যে সবথেকে কনিষ্ঠ ব্যক্তি।