একুশে বিজেপির মুখ কে, কৌশলী উত্তর অমিত শাহের

Sangita Chowdhury

Published on:

নিজস্ব প্রতিবেদন : ২১-এর নির্বাচনে রাজ্যে শাসক দলের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ বিজেপি। বিগত বছরের পঞ্চায়েত ভোটের ফল লক্ষ্য করলে দেখা যায়, শাসকদলের খুব ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস নিচ্ছে বিজেপি। কয়েক বছরের মধ্যেই রাজ্যে বিজেপি নিজের ক্ষমতা এমন ভাবে বৃদ্ধি করেছে যে বিজেপি এখন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে গণ্য।

কিন্তু এক্ষেত্রেও শাসক দলের একটি স্বস্তির বিষয় আছে। তা হল বঙ্গ বিজেপিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো প্রধান মুখ নেই। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বিপুল জনপ্রিয়তা সেই জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দিতে গেলে বিজেপিতেও ব্যাপক জনপ্রিয় কোন মুখের দরকার, ঠিক যেমনটা হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। বাম সরকার ফেলার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনদরদী ভাবমূর্তি কাজে এসেছিল। কিন্তু বিজেপিতে সেরকম প্রধান মুখের অভাব, এই প্রশ্নের মুখোমুখি বঙ্গ বিজেপিকে এর আগেও বহুবার হতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেও একই প্রশ্ন ওঠে। বিজেপির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই প্রশ্নের জবাবে হেসে উত্তর দেন, “সে রকম প্রয়োজন পড়লে ব্যক্তিও চলে আসবেন। মুখও চলে আসবে। বাংলায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি দল সরকার গঠন করবে।”

অমিত শাহর এই বক্তব্যকে ঘিরেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। তেমন জনপ্রিয় মুখ আসার কথা বলতে কার কথা বলা হয়েছে তা সঠিকভাবে বোঝা না গেলেও ডিসেম্বর থেকেই যে তৃণমূলের বিধায়ক, নেতা-মন্ত্রীরা দলে দলে বিজেপিতে যোগ দেবেন এমন দাবি বারবারই করা হয়েছে বিরোধী দলনেতার তরফ থেকে।

কিন্তু তৃণমূল থেকে যারা বিজেপিতে যোগ দেবেন তাদের অবস্থান কেমন হবে বিজেপিতে? এনিয়েও আজকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল দলের হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহজি। তিনি দিলীপ ঘোষের মত বঙ্গ বিজেপির বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের সামনে বলে দেন, অন্য দল থেকে যারা বিজেপিতে আসবেন তাদেরকে দলের মধ্যে যোগ্য সন্মান দিতে হবে, সকলে মিলেমিশে একসাথে কাজ করতে হবে।

এরই পাশাপাশি প্রধান মুখ না থাকার সাথে যে নির্বাচন জেতা হারার সম্পর্ক নেই তা বোঝাতে অমিত শাহজি উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বিগত পাঁচ ছয় বছরে বিজেপি এমন অনেক রাজ্য জিতেছে যেখানে কোন মুখ ছিল না। যেমন উত্তরপ্রদেশ। সেখানে তিনশোর বেশি আসনে জিতেছিল বিজেপি। উত্তর প্রদেশ ছাড়াও মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে প্রধান মুখ না থাকা সত্ত্বেও বিজেপি সাফল্য লাভ করে।”

কিন্তু প্রত্যেকটি রাজ্যেরই রাজনীতির একটি একটি নিজস্ব রীতি থাকে। অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনের সাথে বাংলার নির্বাচন এক নয়। কারণ ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে যখন তৃণমূলের বেশিরভাগ ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ আসছে তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দলের প্রধান মুখ। প্রার্থীরা ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই বলতেন যে ২৯২টি আসনের প্রার্থী দিদিই। তারা কেবল দিদির আদেশ পালনের জন্য আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের রাজনৈতিক সততা দিয়েই নির্বাচন জিতেছেন এমন দৃষ্টান্তও কম নয়। সেক্ষেত্রে বিজেপিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে টেক্কা দিতে যে ধাক্কা পোহাতে হবে সেদিকে বিশেষজ্ঞদের বরাবরই ইঙ্গিত আছে।

কিন্তু এনিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র বলেন, “মুখও পুরোনো হয়। মানুষ বুঝে গেছে যে সততার মুখোশের মধ্যে ভাঁওতা রয়েছে। রেশনের চাল চুরি হয়ে যাচ্ছে, আমফানের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে, কাটমানির ঠেলায় বাংলা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, আর উনি কিছুই জানেন না। এমন যে হয়না মানুষ এটা বুঝে নিয়েছে। মানুষ এও জেনে গিয়েছে যে কার প্রশ্রয়ে বাংলার গুন্ডা বদমাইশ এইভাবে বেড়ে উঠছে। ফলে ঐ মুখই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা নতুন মুখ খুঁজছে।”

কিন্তু বঙ্গ বিজেপির সেই প্রধান মুখ কে, বাংলার মানুষকে দিশা দেখানোর নতুন মুখই বা কে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শুধু অমিত শাহ তাঁর বাকচাতুর্য্যের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে থাকা দীর্ঘদিনের সেই কৌতুহলকেই আরও একটু উস্কে দিলেন।