FCI-এর চাল বাড়িতে মজুদ রেখেছে তৃণমূল নেতারা, প্ৰমাণ দেখিয়ে অভিযোগ বিজেপির

হিমাদ্রি মণ্ডল ও লাল্টু : দিন দুয়েক আগেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, “কেন্দ্র সরকারের পাঠানো চাল অর্থাৎ FCI-এর চাল গুণগতভাবে নিকৃষ্টমানের। এই চাল মানুষের খাওয়ার যোগ্য নয়। কেন্দ্র সরকার কি পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের গরু-ছাগল ভাবে?”

বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের এহেন মন্তব্যের পরেই কোমর বেঁধে মাঠে নামে বিজেপি। পরদিনই বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল ও তার দলীয় কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ দেখায়। পাশাপাশি বিজেপির তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, “কেন্দ্র থেকে যে চাল পাঠানো হয় তা ১ নম্বর, উৎকৃষ্ট মানের। আর এখানকার তৃণমূল নেতারা সেই চালের বস্তা পরিবর্তন করে অথবা লরিকে লরি গায়েব করে নিম্নমানের চাল সাপ্লাই করে। আর কেন্দ্রের পাঠানো ভাল চাল অনুব্রত বাবু ও তার দলবলের রাইস মিল থেকে সাপ্লাই হয়। সাধারণ মানুষ যেন কেন্দ্রের পাঠানো উৎকৃষ্টমানের চাল সম্পর্কে জানতে না পারেন তার জন্য গতকাল তিনি নাটক বাজি করেছেন।”

এরপর? এরপর এবার কোনরকম অভিযোগ নয় সরাসরি প্রমাণ করতে মাঠে নামলেন বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল। তিনি মঙ্গলবার নতুন করে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন সিউড়িতে।যেখানে কেন্দ্রের পাঠানো চালের স্যাম্পেল তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে এবং তার গুণগতমান বিচার করতে বলেন। পাশাপাশি জানান, “দুবরাজপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি ভোলা মিত্রর বাড়ি থেকে এফসিআই গোডাউনের সরকারি লোগো লাগানো চালের বস্তা সাপ্লাই হচ্ছে তা ধরা পড়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছি এফসিআই অথবা রেশনের চাল তৃণমূল নেতারা চুরি করছে। আর আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গেল। হাতেনাতে ধরা পড়ার সেই ভিডিও সকলের কাছে পৌঁছে গেছে।”

এছাড়াও তিনি নিশ্চিতভাবে জানান, “বীরভূম জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ৫০০ প্যাকেট চাল রয়েছে প্রতিকৃতি ময়দান ক্লাবে। আর আরও ৫০০ প্যাকেট এফসিআইয়ের চাল রয়েছে পৌরসভার নায়েক পাড়ার পার্কে। আজ এগুলি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হোক তাহলেই সব কিছু প্রমাণ হয়ে যাবে। এছাড়াও বীরভূমের মন্ত্রী আশীষ বাবুর বাড়িতে এফসিআইয়ের লোগো লাগানো চাল ঢুকছে। তৃণমূলের প্রত্যেক নেতা চুরি করা চালে বেঁচে রয়েছেন। চুরি চাল, বেপথের চাল অনুব্রত মণ্ডলের, মমতা দিদির ঝান্ডা লাগিয়ে বিলি করছে। নাম কামানোর সস্তা প্রতিষ্ঠিত উনারা চালাচ্ছেন।”

প্রসঙ্গত, এদিন সকালে দুবরাজপুরের বিজেপি ব্লক সভাপতি সাধন ধীবর অভিযোগ করেন, “বালিজুরি অঞ্চলের তৃণমূল নেতা সুদীপ দাস গাড়ি করে এফসিআইয়ের চাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর ওই তৃণমূল নেতাকে ধরা হলে তিনি জানান ব্লক সভাপতি ভোলা মিত্রের বাড়ি থেকে সকল চাল নিয়ে আসছি।” এর পরেই ওই বিজেপি কর্মীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, “কিভাবে এফসিআইয়ের সরকারি চাল এক তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে আরেক তৃণমূল নেতার বাড়িতে যেতে পারে? তৃণমূল নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের, গরিব মানুষের চাল চুরি করছে।”

তবে এই সমস্ত অভিযোগকে অস্বীকার করে দুবরাজপুর তৃণমূল ব্লক সভাপতি ভোলা মিত্র জানান, “আমার কাছ থেকে চাল গিয়েছে একথা সত্য। আসলে জেলা থেকে ২৫ কুইন্ট্যাল করে চাল এসেছিল এলাকায় দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সকল চালের বেশিরভাগ বস্তায় ফাটা ছিল। সে কারণে আমরা বেশ কিছু বস্তা পরিবর্তন করে দিয়েছি। আর সেই বস্তা পরিবর্তন করার জন্য আমরা রেশন ডিলারের থেকে খালি বস্তা কিনেছিলাম। আর সেই সকল বস্তাতে কি স্ট্যাম্প মারা আছে সে সকল আমরাও এত লক্ষ্য করে দেখি নাই। বিজেপির করা অপপ্রচার সব ভিত্তিহীন।”