সাবানের উপর কবিগুরু, মোদিকে এঁকে ভাইরাল চিরঞ্জিৎ, স্বপ্ন বিখ্যাত শিল্পী হওয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদন : চোখেমুখে স্বপ্ন বিখ্যাত শিল্পী হওয়ার। আর এই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে তার প্রতিভার অভাব না থাকলেও অভাব রয়েছে অর্থ এবং সামাজিক পরিস্থিতি। অভাব এতটাই যে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যেসকল সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়ে থাকে তাও কেনার মত সামর্থ্য তার নেই। দু’দিন আগেই এই যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলেন সাবানের উপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রূপ দিয়ে। তবে যতই আর্থিক প্রতিকূলতা থাকুক না কেন তার এই লড়াই চলবে বলেই জানিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই যুবক অর্থাৎ চিরঞ্জিত মালকে এখন বাংলার অধিকাংশ সোশ্যাল নেটিজেনরাই চেনেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পোস্ট ভাইরাল হয়েছিল তাতে বেশ কিছু ভুল তথ্য ছিল। যেমন ভুল তথ্য ছিল তার বাড়ি নিয়ে। বহু খোঁজাখুঁজির পর জানা যায় চিরঞ্জিত মাল বীরভূমের নলহাটির বুজুং গ্রামের বাসিন্দা। ছোট থেকেই তাঁর ছবি আঁকার প্রতি অদম্য ইচ্ছে রয়েছে এবং সেই ইচ্ছের উপর ভর করেই বর্তমানে তার এমন কারুকার্য।

একেবারে গ্রাম্য এলাকায় বসবাস করা চিরঞ্জিতের মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে খড়ের চাল। বর্তমানে চিরঞ্জিত এলাকার ২০ থেকে ২৫ জন খুদেদের ছবি আঁকা শেখান এবং বাকি সময় মাঠে দিনমজুরের কাজ করে সংসারের খরচ জোগাড় করে। বাড়িতে চিরঞ্জিত ছাড়াও রয়েছে তার দাদা, তবে তিনি আলাদা থাকেন। অন্যদিকে তার বাবা-মা জয়দেব মাল এবং মাধুরী মাল বয়স এবং শারীরিক কারণে কাজ করতে অক্ষম।

চিরঞ্জিত বুজুং ২ নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে সেখানকার বিষ্ণুনারায়ন আদর্শ শিক্ষাপীঠে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন৷ পরে নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজ থেকে ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করে চিরঞ্জিত। তবে আর্থিক অনটনের কারণে আর পড়াশুনো এগোয়নি। ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময় জীবন বিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষক শুশোভন মন্ডলের চোখে পরে চিরঞ্জিতের হাতের কাজ। আর সেটা দেখার পর চিরঞ্জিতকে পাশের গ্রামে ছবি আঁকা শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেয় শুশোভন বাবু৷ পাশের গ্রাম অর্থাৎ বশোয়া বিষ্ণুপুর গ্রামে প্রানকৃষ্ণ সিমলান্দির কাছে অঙ্কন শিখতে যায় চিরঞ্জিত। ওই শিক্ষক চিরঞ্জিতের পারিবারীক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে নিজের দায়িত্বে অঙ্কন শেখানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পরেন। এর পর থেকেই চলে ছবি আঁকার কাজ৷

২০১৭ সালে চিরঞ্জিত সাবানের উপর গোলাপের ছবি তৈরী করে নিজের প্রচেষ্টায়। ধীরে ধীরে অনেক মনীষীদের ছবিও বানিয়ে চিরঞ্জিত৷ এর পাশাপাশি মাটিরও অনেক মূর্তি তৈরি করেছে সে। শুধু মাটি অথবা সাবান নয়, চিরঞ্জিত কুমড়োর দানার উপর তৈরি করেছে মূর্তি, মটোর দানার উপর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের ছবি এঁকেছে। তবে সম্প্রতি সাবানের ওপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

[aaroporuntag]
এর পাশাপাশি চিরঞ্জিত বর্তমানে সাবানের উপর রামপুরহাট বিধানসভার বিধায়ক ডঃ আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মূর্তি তৈরি করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশীষ বন্দোপাধ্যায়কে ডেপুটি স্পিকার ঘোষণা করার পরেই চিরঞ্জিত এই কাজ শুরু করে। তার লক্ষ্য হলো এই মূর্তিটি তাকে উপহার দেওয়ার। এমন নজিরবিহীন প্রতিভা সম্পন্ন দীন দরিদ্র ঘরের চিরঞ্জিতের একটাই কথা, ‘আমি বড় শিল্পী হতে চাই’।