নিজস্ব প্রতিবেদন : আর্থিক অনটনে জেরবার। পেটের খিদে মেটাতে অসুস্থ বাবাকে ভ্যানে চাপিয়ে সেই ভ্যান টানছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। যখন এই মেয়েটির খেলে বেড়ানোর সময়, পড়াশোনার সময়, তখন তাকে এমনই পথ বেছে নিতে হয়েছে। উপায় নেই। কারণ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা যে আজ অসুস্থ।
ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী ঝিলিক বাবা বছর তেতাল্লিশের সুশান্ত মন্ডলের দুটি হাতের দশটি আঙ্গুলই বেঁকে গিয়েছে। পা দু’টি সরু লিকলিকে হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় মায়ের কষ্ট দেখতে না পেলে ঝিলিক হাতে তুলে নেয় ভ্যানের স্টিয়ারিং। তারপর সেই ভ্যানে বাবাকে কম্বল মুড়িয়ে শুইয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্যান চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাহায্যের আর্তি নিয়ে।
এই ভাবেই ওই ছাত্রী এবং তার মা মাইলের পর মাইল কখনও হেঁটে কখনো আবার ভ্যান চালিয়ে ছুটে চলেছেন। ঝিলিকের মা শ্যামলী দেবী মেয়ের এই কষ্ট দেখেও কেবলমাত্র খিদে মেটানোর তাগিদে সবকিছু চোখ বন্ধ করে সহ্য করছেন। মেয়ের ভ্যান চালানোর সময় পিছন থেকে ঠেলে যতটা পারছেন সাহায্য করছেন।
কচি হাতে ঝিলিক এই ভাবেই ভ্যান চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার অলিতে গলিতে। কষ্ট করে এই ভাবে ভ্যান চালানোর পাশাপাশি তাকে মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে, ‘বাবু গো সাহায্য করুন’। তবে এই ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে থাকলেও তা চাওর হয় শনিবার।
শনিবার সকালে ঝিলিক তার বাবাকে ভ্যানে চাপিয়ে রামচন্দ্রপুর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে উলুবেড়িয়ার কালসাবা এলাকায় চলে আসেন মা শ্যামলীকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর পড়ন্ত বেলায় যখন তারা বাড়ি ফিরছেন সেই সময় হঠাৎ করে এমন ঘটনা নাড়িয়ে দেয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রত্যেকেই নিজেদের সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়ান, পাশাপাশি এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরই সাংসদ থেকে প্রশাসনিক কর্তারা তাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন।
অসুস্থ সুশান্ত মন্ডল হাওড়ার উলুবেড়িয়া এক নং ব্লকের হীরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন একজন দিনমজুর। দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থাতেই তাদের বেশ ভালোভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু ১৯ বছর আগে হঠাৎ সুশান্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি আক্রান্ত হন আর্থারাইটিসে। তারপর থেকেই তার শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে, হাতের আঙ্গুল বেঁকে যাওয়ার পাশাপাশি তার দুটি পা ক্রমশ সরু লিকলিকে হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চলাফেরার ক্ষমতাটুকুও হারান সুশান্ত।