যা হবে বাড়িতে হোক, এই ভেবে উত্তরপ্রদেশ থেকে সাইকেলে পাড়ি মুর্শিদাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদন : লকডাউনের ঠিক আগেই মার্চ মাসের ২ তারিখ উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে প্রতিমা গড়ার কাজে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ১৪ জন মৃৎশিল্পী। তারপর দেশে বাড়তে থাকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। বন্ধ হয়ে যায় পূজার্চনা, সমাবেশ।

যে কারণে আর প্রতিমা তৈরি করার কাজও হয়নি। এরপরেই লকডাউন শুরু হতেই ওখানেই আটকে যান ওই ১৪ জন মৃৎশিল্পী। কোনরকম সরকারি সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ। না পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের থেকে সহযোগিতা, না পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে সহযোগিতা। শেষমেষ যা হবে বাড়িতে হবে, এই ভেবে মালিকের কাছ থেকে টাকা ধার করে সাইকেল নিয়ে ১৪ জন মৃৎশিল্পী পাড়ি দিলেন মুর্শিদাবাদ।

উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে সোমবার ওই সকল মৃৎশিল্পীরা সকাল দশটা নাগাদ এসে পৌঁছান রামপুরহাট শহরে। প্রতিবছরই তারা উত্তরপ্রদেশের সিদ্ধার্থনগরের বাঁশি এলাকায় প্রতিমা তৈরি করতে যান। কিন্তু এবছর এমন বিপদে তাদের পড়তে হবে তা তারা কখনো ভেবেও ওঠেননি। সরকারিভাবে কোনো রকম সাহায্য পাওয়া না গেলেও ওই মৃৎশিল্পীরা যার কাছে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি তাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন বলে জানান তারা। কাজ না করা অবস্থাতেই দীর্ঘদিন তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং বাড়ি ফেরার সময় মোট ৫৫০০০ টাকার সাইকেল কিনে দেন। মৃৎশিল্পীরা প্রতিশ্রুতি দেন বাড়ি ফিরে টাকা পাঠিয়ে দেবেন অথবা পরে কাজ করে তা শোধ করে দেবেন।

মৃৎ শিল্পীদের এক শিল্পী শুভদীপ পাল জানান, “বাসন্তী পূজার জন্য প্রতিমা তৈরি করতে গিয়ে লকডাউনের পাল্লায় পড়ে আমরা আটকে পড়েছিলাম। অবশেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে যা হওয়ার বাড়িতে হবে এই ভেবে সাইকেল কিনে ৯০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আমরা আসছি। আমরা আমাদের বাড়ি কান্দিতে পৌঁছে প্রথমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবো। সেখানে চিকিৎসকেরা যেমন পরামর্শ দেবেন সেই ভাবে আমরা চলবো। কারণ আমাদেরও পরিবার আছে। পরিবারের ক্ষতি তো আমরা চাইবো না।”

মোটের উপর ওই মৃৎশিল্পীদের ৯০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আসার পরও এখনো ৫০ কিলোমিটারের বেশি পথ যেতে হবে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য। আর এই এত রাস্তা সাইকেল চালিয়ে ফেরার সময় রামপুরহাটে কিছুটা সময় বিশ্রাম নেওয়া।