Digha: যেতে আসতেই সময় লাগতো ৪ দিন, একসময় দীঘা যাওয়ার ব্যবস্থা শুনলে আর মুখেও আনবেন না

Shyamali Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের যে সকল সমুদ্র সৈকত রয়েছে তার মধ্যে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতটি হলো দিঘা (Digha)। দীঘা শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের কাছে নয়, পাশাপাশি দেশ-বিদেশেরও বিভিন্ন পর্যটকদের কাছে তা জনপ্রিয়। তবে বাঙ্গালীদের হাতের কাছে থাকার কারণে দীঘা যাওয়া আসা এখন কোন ব্যাপারই না। ৪ ঘন্টায় যাওয়া আর ৪ ঘন্টায় আসা হয়ে যায়। কিন্তু একসময় দীঘা যেতে আসতেই সময় লাগতো ৪ দিন। যে সময় দিঘা যাওয়া আসার ব্যবস্থায় ছিল অন্যরকম।

Advertisements

একসময় কলকাতা থেকে দীঘা যেতে সময় লাগতো দুদিন এবং সেখান থেকে ফিরে আসার জন্য সময় লাগতো আরও দুদিন। যে পথ এখন আমরা সবচেয়ে বেশি চার চার আট ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে থাকি। আমরা এখন যে সময়ের কথা বলছি সেই সময়টি হল ১০০ বছর আগে। সেই সময়কার দিঘা অবশ্য এখন সমুদ্রের তলায় চলে গিয়েছে। সেই সময় আবার দিঘার নাম ছিল বীরকুল পরগনা। ১৯৭৫ সালে ওয়ারেন হেস্ট্রিংস এখানে গরমের ছুটি কাটানোর জন্য একটি বাংলো তৈরি করেছিলেন। বীরকুলের সৈকতে যেখানে ওয়ারেন হেস্ট্রিংস বিশ্রামাগার তৈরি করেছিলেন সেই জায়গাকে তিনি বলতেন ‘Brighton of the East’।

Advertisements

তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিক্ষয়ের কারণে ওয়ারেন হেস্ট্রিংসের সেই বাংলো আর নেই। পাশাপাশি বীরকূল নামে ঐ গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে সমুদ্রে গর্ভে চলে যায়, সমুদ্র গর্ভে চলে যায় ওয়ারেন হেস্ট্রিংসের বাংলো। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময় এখনকার মতো রেলপথ যোগাযোগ অথবা এতো ভালো সড়ক যোগাযোগ ছিল না। যে কারণে সেই সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের জন্য বিপুল সময় ব্যয় হতো।

Advertisements

আরও পড়ুন ? Jurassic park in Digha: দিঘায় গিয়ে এবার শুধু সমুদ্রে ঝাঁপানো নয়, দেখা মিলবে ‘জুরাসিক পার্ক’-এর অভিনব পার্কের

১৭৮০ সাল নাগাদ কলকাতা থেকে দীঘা যাওয়া সাধারণ মানুষদের কাছে ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কেননা সেই সময় কলকাতা থেকে দীঘা যেতে হলে স্থানীয় মানুষদের হাতি, ঘোড়া, গরুর গাড়ি অথবা নৌকায় চড়ে যেতে হতো। তবে এর জন্য যে খরচ হতো তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা ছিল এক প্রকার অসম্ভব। সাহেবরা এই পথ অতিক্রম করে দীঘায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য কিছুটা পথ হাতি, কিছুটা পথ ঘোরা এবং কিছুটা পথ নৌকায় অতিক্রম করতেন।

১৯১১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে কলকাতার সঙ্গে দীঘার যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতি করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর ১০ বছর পর দীঘায় এসেছিলেন কলকাতার বিখ্যাত হ্যামিলটন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জন স্নেইথ। তিনি প্রথম ওভার লেনের গাড়ি চড়ে বেলদা এবং বেলদা থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাঁথি পৌছেছিলেন। এরপর দিঘার প্রেমে পড়ে বিভিন্ন সময় সিটার প্লেনে চড়ে তিনি দীঘায় তৈরি সাহেবদের জন্য বাংলোতে আসতেন। তবে এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫০ সালে প্রথম খড়গপুর থেকে দীঘার উদ্দেশ্যে পিচের রাস্তা তৈরি হয়। সেই সময় প্রথমে কলকাতা থেকে ট্রেনে খড়গপুর, এরপর সেখান থেকে বাসে কাঁথি এবং তারপর আবার কাঁথি থেকে বাস বদলে দিঘা যেতে হতো। সেই সময় বাসগুলির অবস্থা এখনকার মতো উন্নত না হলেও যাত্রীদের জন্য কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস এবং থার্ড ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল। তবে দীঘা সবচেয়ে উন্নয়নের মুখ দেখতে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের সময় থেকে। আর সড়কপথে দীঘার সবচেয়ে উন্নতির হতে শুরু করে ১৯৭০ সালের পর।

Advertisements