লাল্টু : মাঠে ঘাটে সবুজ ধান, কাশফুল আর শিউলি ফুল, পুকুরে শালুক ও পদ্ম ফুল, আকাশে বাতাসে জানান দিচ্ছে পুজো আসছে। বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গোৎসব আসতে বেশ কয়েকটা দিন দেরি থাকলেও বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় এবং রায় পরিবারের দুর্গাপূজো শুক্রবার থেকেই শুরু হয়ে গেল। কয়েকশো বছরের প্রাচীন রীতি অনুসারে পূজো শুরু কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে, যা দুর্গাপুজোর মহানবমীর ঠিক একপক্ষ কাল আগে উমা আসেন বাড়িতে। তবে অন্যান্য বছর পুজোর ১৫ দিন আগে আসলেও এবছর উমা এলেন ৪৫ দিন আগে। কারণ এবার আশ্বিন মাস মলমাস হাওয়াই বোধনের পর দুর্গাপুজো প্রায় ৪৫ দিন পর হবে।
এদিন কৃষ্ণপক্ষের নবমীর শুভ তিথিতে রীতি মেনে এই দুই পরিবার যমুনা সায়র পুষ্পরনী থেকে বেলা বারোটা নাগাদ বাদ্যযন্ত্র সহকারে ঘটা করে মঙ্গলঘট নিয়ে এসে মা দুর্গার পুজো শুরু করে দিলেন। এ দৃশ্য ঠিক মহাসপ্তমীর সকালের মত, যেদিন অন্যান্য দুর্গা পুজোর নবপত্রিকা স্নানের জন্য শোভাযাত্রা করা হয়।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোর দায়িত্বে থাকা বিমান মুখোপাধ্যায় জানান, “এই পুজো আরম্ভ করেছিলেন কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়। সময়টা ১১১১ বঙ্গাব্দ। তিনি রাজনগরের নবাবের দেওয়ান ছিলেন। একদা বীরভূমের রাজধানী ছিল রাজনগর। রাজনগরের নবাব আলিনকি খান সুচারুভাবে দুর্গাপুজো চালানোর জন্য ৬৪ বিঘা জমি, ৭ টি পুকুর এবং একটি বড় পুস্করনী দান করেন পুজো চালানোর জন্য। তারপর থেকেই রীতি মেনে কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে দুর্গা মায়ের বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। এই পুজো বর্তমানে চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, বন্দোপাধ্যায় শরিকদের। রীতি মেনে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এই পূজো চলে আসছে।”
অন্যদিকে রায় পরিবারের পুজোর উৎস সম্পর্কে পুলক রায় জানান, “বালিজুড়ি গ্রামের সবথেকে প্রাচীন পুজো হলো এই রায় পরিবারের পুজো। আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে এক কাপালিক এই পুজো শুরু করেছিলেন। তারপর থেকেই রীতি মেনে রায় পরিবার কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে যমুনা সায়র থেকে ঘটা করে চট্টোপাধ্যায় এবং রায় এই দুই পরিবারের দেবী মায়ের মঙ্গলঘট আনা হয়। এরপর আজ থেকেই দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয় আগামী বিজয়া দশমী পর্যন্ত।”
এদিন দুই পরিবারের মহিলারা রীতি মেনে বরণ করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন মন্দিরের সামনে। এই পুজোয় বলিদান প্রথা আজও রয়েছে দুটি পরিবারেই। বালিজুড়ি গ্রামের এই দুই পরিবারের দুর্গাপুজো ঘিরে ওই পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সাধারণ মানুষদের মধ্যেও দেখা যায় আলাদা উৎসাহ উদ্দীপনা। আজ থেকেই প্রসাদ বিতরণ এবং ভোগের আয়োজন থাকে। বিভিন্ন পাড়ার মানুষেরা এই ভোগ নেওয়ার জন্য নিমন্ত্রিত থাকেন। কিন্তু এবার করােনা ভাইরাসের কারণে নেমন্তন্ন করে খাওয়ানো বন্ধ রয়েছে শুধুমাত্র পরিবারের লোকজনই প্রসাদ খাবে।
এই পূজো বর্তমানে রীতিনীতিতে কোনরকম নড়চড় হয়নি। বরং দিনের পর দিন এই পূজাকে ঘিরে বাড়ছে আরও উৎসাহ উদ্দীপনা কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর আনন্দের কিছুটা ভাটা পড়েছে।