Kali Puja 2024: মহামায়ার রুদ্রচন্ডাল রূপ হলো কালিকারূপ। মা কালী শশ্মানবাসিনী, তার হাতে থাকে খড়গ এবং মস্তক, আর গলায় ঝোলে মুন্ডমালা। আদি শক্তির এই রুদ্ররূপ যেমন ভয়ংকর তেমনি মমতাময়ী। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে বিভিন্ন জায়গায় ধুমধাম করে পালন করা হয় কালীপুজো। মাতৃ আরাধনায় মেতে ওঠে ভক্তেরা। বিভিন্ন মন্দিরে এই দিন ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। একেকটি মন্দিরে একেক রকম নিয়ম মেনে পুজো করা হয় মা কালীকে এবং ভোগের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায়।
কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিভিন্ন জনপ্রিয় কালী মন্দির রয়েছে। এইসব মন্দিরের পুজোর (Kali Puja 2024) নিয়ম যেমন আলাদা তেমন ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। ভক্তদের ভিড় দেখা যায় মায়ের ভোগ খাওয়ার জন্য। জানেন কি বাংলার কোন মন্দিরে কোন ভোগ নিবেদন করা হয় মা কালীকে? না জানলে আজকের এই প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়লে বিস্তারিতভাবে সবই জানতে পারবেন।
আরো পড়ুন: কলকাতায় মা কালির এই অদ্ভুত কয়েকটি মন্দিরে ঢুকলে গা শিউরে উঠবে আপনার।
তারাপীঠ
তারাপীঠ বাঙালিদের কাছে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। মনের কামনা বাসনা জানানোর জন্য ভক্তরা ভিড় করে তারা মার কাছে। মায়ের পাগল ছেলে বামাখ্যাপার অন্যতম সাধনাস্থল ছিল তারাপীঠ। তার দৌলতেই আজকের এই জনপ্রিয়তা। এখানে বছরের বেশিরভাগ সময় ভক্তদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মা কালী এখানে তারা মা হিসেবে প্রসিদ্ধ। সারা বছর নানা ব্যঞ্জন সাজিয়ে নিবেদন করা হয় মা’কে। কালীপুজোর দিন (Kali Puja 2024) এখানকার আয়োজন চোখে পড়ার মতো, সকালে নিবেদন করা হয় অন্নভোগ। এরসাথে থাকে পোলাও, খিচুড়ি এবং সাদা ভাত। সঙ্গে পাঁচ রকম ভাজা, তিন রকম তরকারি। এমনকি মাকে চারাপোনা, কাতলা, রুই-সহ বিভিন্ন মাছ রান্না করে নিবেদন করা হয়। তান্ত্রিক মতে নিবেদিত বলির পাঁঠার মাংস কারণবারি সহযোগে নিবেদন করা হয় তারা মা’কে। ভোগে থাকে পায়েস, চাটনি, দই, এবং পাঁচ রকম মিষ্টি। তারা মাকে রাত্রিবেলা ভোগ দেওয়া হয় খিচুড়ি। এখানে প্রায় দেড় কুইন্টাল খিচুড়ি রান্না করা হয় এবং সাথে থাকে পাঁচ রকম সবজির ভাজা, তরকারি, শোল মাছ পোড়া, ও বলি-দেওয়া পাঁঠার মাংস। সাথে কিন্তু কারণবারি থাকবেই। শুধুমাত্র যে মন্দির কতৃপক্ষ মায়ের কাছে ভোগ নিবেদন করেন তা নয়, অনেক ভক্তরাও আসেন ভোগ নিবেদনের জন্য।
আরো পড়ুন: মন্দিরে কে বিরাজমান? মা কালী নাকি জগন্নাথদেব? কেন সংশয় ভক্তদের মনে?
কালীঘাট
কলকাতার বুকে মায়ের অন্যতম শক্তিপীঠ হলো কালীঘাট। এই মন্দিরে যে শুধু নিত্য কালীপুজো হয় তা নয়, নিয়ম করে প্রতিদিন করা হয় লক্ষ্মীপুজোও। কালীপুজোর দিন যে পালাদার ভোগের দায়িত্বে থাকেন, তিনিই ভোগের সমস্ত খরচ বহন করেন। বর্তমানে কালীঘাট মন্দিরে রয়েছে প্রায় ৬০০ সেবায়েত। কালীপুজোর দিন (Kali Puja 2024)দায়িত্বপ্রাপ্ত পালাদার-সহ আরও প্রায় শ’দেড়েক সেবায়েত ভোগ নিবেদন করে এই মন্দিরে। অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার আগে মা কালীকে একপ্রস্ত ভোগ দেওয়া হয়। এই বিশেষ দিনে মায়ের ভোগে থাকে শুক্তো, পাঁচ রকমের ভাজা যেমন- আলু, বেগুন, পটল, উচ্ছে অথবা করলা, ও কাঁচকলা ভাজা, পোলাও। এরসাথে থাকে তিন রকম মাছ রুই, ইলিশ, চিংড়ির পদ, কচি পাঠার মাংস, চাটনি ও পায়েস। মাকে শেষ পাতে মুখসুদ্ধি দিতে হয় যেমন পান ও জল।
দক্ষিণেশ্বর
বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান হলো ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ এবং রানী রাসমণির স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণেশ্বর। মা কালীকে এখানে পূজা করা হয় ভবতারিণী রূপে। ভবতারিণী রূপের কথা সেভাবে কোনো নথিতেও উল্লেখ নেই। পন্ডিত রামকুমার চট্টোপাধ্যায় যে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা লিপিবদ্ধ রয়েছে শ্রী শ্রী জগদীশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানী নামেই। এখানে দেবীকে বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়। অন্নভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয় ভাত ও ঘি ভাত। এরসাথে দেওয়া হয় পাঁচ রকম তরকারি, পাঁচ রকমের ভাজা ও পাঁচ রকমের মাছ। শেষে থাকে চাটনি, পায়েস এবং পাঁচ রকমের মিষ্টি। বিকেলে মাকে নানারকমের ভোগ নিবেদন করা হয়। কোনো এক সময় বলি প্রথা ছিল, কিন্তু বহু কাল তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখানে মাকে মাংস নিবেদন করা হয়না। শ্রী রামকৃষ্ণএর নিয়মকানুন মেনে আজও পুজো হয় দক্ষিণেশ্বরে।