বাড়ি থেকে পালিয়ে রমেশ থেকে রেমো, অনুপ্রেরণায় ভরা বিখ্যাত কোরিওগ্রাফারের অজানা কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদন : কষ্টের মধ্য দিয়ে যারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হন, তাদের জীবনের ঘটনা আর‌ও পাঁচটা মানুষকে জীবন যুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা জোগায়। বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার রেমো ডিসুজার জীবনের ঘটনাও ঠিক সেইরকম।

বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন রমেশ যাদব, তারপর দীর্ঘ লড়াই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তিনিই হয়ে উঠলেন কোরিওগ্রাফার রেমো ডিসুজা। একদিন যার সংসারের নিত্য অভাব লেগে থাকতো, আজ তিনি কোটি কোটি সম্পত্তির মালিক! রিমোর জীবনের সেই সত্য ঘটনা জানলে অনেকেই চমকে যাবেন।

কর্নাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরুতে ১৯৭২ সালের ২রা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন রেমো ডিসুজা ওরফে রমেশ যাদব। তার বাবা এয়ারফোর্সের রান্নার কাজ করে যা আয় করতেন তাতে তাদের সংসারের স্বচ্ছল অবস্থা তৈরি হয় নি। তাই বাবাকে সাহায্য করবার জন্য রেমো একটি বেকারি রেশন শপ ও সাইকেল মেরামতের দোকানে কাজ করতেন। তবে এই সকল কাজের মধ্যেখানেও তার স্বপ্ন সব সময় তাকে তাড়া করে বেড়াতো। রেমো তাই নাচ নিয়ে তার ক্যারিয়ার তৈরি করার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বই ছুটেছিলেন।

৪৫ বছর বয়সী রেমোকে তার নাচের জন্য আজ সকলেই এক নামে চেনেন। তবে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর নিজের স্বপ্নপূরণ করার পথটি কিন্তু তার জন্য মোটেই সহজ হয় নি। ঝোঁকের বশে স্বপ্ন পূরণের তাগিদে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি, তবে সে সময় সেই রকম অর্থ‌ও তার কাছে ছিল না।

যার জন্য ক্ষুধার্থ পেটে তাকে অনেক রাত স্টেশনে কাটাতে হয়েছিল। নানান রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। এমনও দিন গেছে যে সারাদিন তার এতোটুকুও খাবার জোটে নি। এই সময় লিজেলের সাথে দেখা হয় তার। দুজনের সম্পর্ক গভীরতা পায় এবং তারপর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরও রেমো তার স্ত্রীর সাথে স্টেশনে রাত কাটিয়েছেন। তবে তার জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে তার স্ত্রী সব সময় তার পাশে ছিলেন।

জীবনের এই কঠিন সময়ের মধ্যেই একটি নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি বিজয়ী হন এবং তারপরই উর্মিলার ছবি ‘রঙ্গিলা’তে নাচার সুযোগ পেয়ে যান। এরপরই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে রেমোর। সনু নিগমের প্রথম অ্যালবাম ‘দিবানা’ নাটকে অভিনয় করার পাশাপাশি কান্তে চলচ্চিত্রের আইটেম সং ইশক সমান্দার তাকে বড় অর্থে পরিচিতি দিয়েছিল এবং এরপরই নাচ নিয়ে তার ক্যারিয়ার সেই অর্থে শুরু হয়েছিল।

রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোনের সুপারহিট ছবি ‘বাজিরাও মাস্তানি’র টাইটেল সং ‘দিবানি মাস্তানি’র জন্য‌ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন রেমো। এছাড়া হিন্দি সিনেমায় পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। জীবনের নানা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়েও তিনি ভেঙে পড়েননি। আজ তাই তিনি এত পরিচিত হয়ে উঠেছেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছেন রেমো ডিসুজা।