বল হাতে বিশ্বকাপ জেতানো ক্রিকেটার করোনায় লাঠি হাতে দেশকে দিচ্ছেন সুরক্ষা

Madhab Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : সময়টা ২০০৭ সাল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুখোমুখি ভারত। আর সেই ম্যাচের শেষ ওভারে স্নায়ুর চাপ ধরে রেখে বল করে দেশকে জিতিয়েছিলেন ভারতের অন্যতম প্রাক্তণ ক্রিকেটার যোগিন্দর শর্মা। বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক সেই যোগিন্দর শর্মা এখন পরিবারকে দূরে সরিয়ে রেখে রাস্তায় নেমে করোনার বিরুদ্ধে অন্যান্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন। আর এই লড়াই চালানোর জন্য তিনি বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ভুলে গেছেন। বাড়ি না ফেরার পিছনে রয়েছে আরও এক কারণ, তাহলো পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা। করোনা ছোঁয়াচে ভাইরাস, তাই নিজে যখন এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন তখন পরিবারের কেউ যেন এর দ্বারা সংক্রামিত না হয় তার জন্য পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে ভুলে গেছেন বাড়ি ফেরা।

Advertisements

Advertisements

২০০৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী এই নায়ক যোগিন্দর শর্মা বর্তমানে হরিয়ানার হিসারের ডেপুটি পুলিশ সুপার। করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ভাঙতে যখন দেশে জারি হয়েছে লকডাউন তখন তিনি সেই লকডাউনকে সফল করতে রাস্তায় নেমে অন্যান্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।নিজের কর্তব্যে এতোটুকু গাফিলতি রাখতে দেখা যাচ্ছে না এই প্রাক্তণ ভারতীয় ক্রিকেটারকে। ইচ্ছে করলে তিনি হয়তো এখন অন্যান্য তারকাদের মত পরিবারের সাথে থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে আসান জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু এমন করাটা তাঁর কর্তব্য বলে মনে হয়নি। তাই তিনি পরিবারকে সুরক্ষিত রেখে নিজে চালিয়ে যাচ্ছেন ডিউটি।

Advertisements

তবে এই কর্তব্য ও ডিউটি করার পাশাপাশি তাঁকে গ্রাস করেছে করোনা সংক্রমণের ভীতি। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই অপরিচিতদের থেকে সংক্রামিত হওয়ার ভয় রয়েছে। আর এই ভয় থেকেই তিনি নিজের বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ তিনি সংক্রামিত হলে সংক্রামিত হতে পারেন তার পরিবারের লোকজনও। তাই তাদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই বাড়ি না গিয়ে নিজের কর্তব্যে অবিচল এই নায়ক।

যোগিন্দর শর্মা আরও জানিয়েছেন, “এখন আমার দিন শুরু হয় সকাল ৬ টায়। সকাল ৯ টা থেকে ডিউটি শুরু করি। তারপর বাড়ি ফেরা রাত ৮ টার কমে হয় না। আবার যখন তখন জরুরী ডাক পেলেই বেরিয়ে যেতে হয়। আমি না বলতে পারবো না, কারণ এটাই আমার কর্তব্য।”

যোগিন্দর শর্মা মূলত হিসারের গ্রাম্য এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন। সেখানকার ট্রাক, বাসচালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যেন সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য প্রতিনিয়ত তাকে ঐসকল মানুষগুলিকে বাড়িতে থাকার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি জানিয়েছেন, একদল শ্রমিক কিছুদিন আগে পায়ে হেঁটে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। সে সময় আমার হাতে মাইক থাকলেও ওই শ্রমিকদের বোঝানোর জন্য এক এক জনকে ধরে ধরে বোঝাতে হচ্ছিল। তারপর কোনরকম তাদের বুঝিয়ে স্থানীয় একটি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে অপরিচিতদের সাথে কথাবার্তা চালানো ও তাদের কাছে আসায় পুলিশকর্মীদের সংক্রামিত হওয়ার ভয় সব সময় থেকে যায়। আর এই ভয় তাকে কিছুটা গ্রাস করলেও তিনি আর পাঁচটা পুলিশকর্মীর মতোই নিজের ডিউটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারতের এই বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তণ ক্রিকেটারের লড়াই সত্যিই অনবদ্য। তিনি যেমন ক্রিকেটের ময়দানে নায়ক শিরোপার অধিকারী, বাস্তব জীবনেও তাই।আর তাঁর এমন লড়াইয়ের কাহিনী সকলের সামনে আসতেই কুর্নিশ জানাতে শুরু করেছেন দেশবাসীরা।

Advertisements