পাশ হয়ে গেল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংশোধনী আইন, এর সুবিধা ও অসুবিধা

Madhab Das

Published on:

নিজস্ব প্রতিবেদন : কৃষি বিল পাশ হওয়া নিয়ে দেশজুড়ে চলছে ক্ষোভ বিক্ষোভ। তবে এসব ক্ষোভ-বিক্ষোভকে কোন রকম পাত্তা না দিয়েই কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে আরও একটি সংশোধনী বিল লোকসভা ও রাজ্যসভার পাশ করা হলো। আর এই নতুন সংশোধনী আইন হলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংশোধনী আইন। প্রায় ছয় দশকের এই আইনের সংশোধনী রাজ্য সভায় পাশ হয়ে গেল গত মঙ্গলবার। কিন্তু এই বিল পাশের ফলে দেশের মানুষের কতটা সুবিধা হবে, নাকি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে তাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।

লোকসভা এবং রাজ্যসভার এই বিল পাশ হওয়ার পর এখন থেকে আর চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেলবীজ, ভোজ্য তেলের মতো কৃষিপণ্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যে পড়বে না। এই বিল দুই সভাতে পাশ হওয়ার পর এখন শুধু রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষা। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হয়ে গেলেই তা আইনে পরিণত হয়ে যাবে। আর আইনে পরিণত হয়ে গেলে এই সকল কৃষি পণ্যের উপর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ উঠে যাবে। এমনকি এই সকল কৃষিপণ্য মজুতের ক্ষেত্রেও আর কোন উর্ধ্বসীমা বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

ভারতে প্রথম অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন চালু হয় ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে। আর এই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয় দেশে লকডাউন চলাকালীন। কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপের ফলে দেশ ও বিদেশের বড় বড় সংস্থার বিনিয়োগ আসবে কৃষি ক্ষেত্রে।

এর পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে এই সকল কৃষিপণ্যের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়নি কেন্দ্র সরকার। অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে এই সকল পণ্যের উপর মজুত বিক্রি এবং অন্যান্য বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করবে।

এই বিল সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, এর ফলে দেশের চাষিরা ফসল উৎপাদন, মজুত, বন্টন ও বিক্রির ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। এর ফলে চাষিদের ফসল কম দামে বিক্রি করার মত সম্ভাবনা কমবে। এর ফলে উপকৃত হবেন কৃষক এবং উপভোক্তা দুই পক্ষই।

তবে এই সংশোধনী আইনে পরিণত হলে যে সকল অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুঁজিবাদীরা এর ফলে বিপুল সুবিধা পাবেন। তাদের তরফ থেকে চাষীদের আগাম ঋণ দিয়ে কম দামে ফসল কিনে নেওয়ার মতো সুযোগ আরও বেড়ে যাচ্ছে এবং সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে মজুত রেখে বাজারে মূল্য বৃদ্ধিও করতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে আইনে মূল্যবৃদ্ধির সময় নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অসুবিধার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেটি হল, কোন কৃষক অথবা ব্যবসায়ী নিজের ইচ্ছেমতো কৃষি পণ্য মজুত রাখা কালীন হঠাৎ করে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সে ক্ষেত্রেও মজুতদারদের এবং কৃষকদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।

তবে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ ও যুক্তি এবং বিরোধী মহলের এই সকল প্রশ্নের আগামী দিনে এই আইন কতটা সুদূরপ্রসারী হয় অথবা এই আইনকে হোঁচট খেতে হয় কিনা তাই এখন দেখার।