The real reason why only red, yellow and green lights are used in traffic signal: কোন বড় রাস্তা পারাপার করতে গেলে নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল। সেই সিগন্যাল মেনেই চলাচল করে বিভিন্ন যানবাহনসহ পথচারীরাও। নিশ্চয়ই খেয়াল করে দেখেছেন ট্রাফিক সিগন্যালে (Truffic Signal Lights) মূলত ৩ টি রং এর আলো ব্যবহার করা হয়। কখনো লাল, কখনো সবুজ, কখনো বা হলুদ রঙের ব্যবহার হয় সিগন্যালে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন সর্বত্র ট্রাফিক সিগন্যালে একই রং ব্যবহার করা হয় কেন? অন্য কোন রং এর ব্যবহার করলে কি অসুবিধা হতে পারে? এই ট্রাফিক সিগন্যাল শুরুই বা করা হয়েছিল কোন ধারনার ভিত্তিতে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রইল আজকের প্রতিবেদনে।
ট্রাফিক সিগন্যালের সূচনা হয় ১৮৬৮ সালের ১০ ই ডিসেম্বর লন্ডনের পার্লামেন্ট চত্বরে। সেই সময় লন্ডনে যানবাহন বলতে ছিল ঘোড়ার গাড়ি এবং সাধারণ ৪ চাকার গাড়ি। ঘোড়া, টেক্কা গাড়ি, ৪ চাকা গাড়ি, পথযাত্রী সবকিছু মিলে একটা বিশৃঙ্খল যানজট সৃষ্টি হতো লন্ডনের রাস্তায়। বিশেষ করে সংসদ চত্বরে এই পরিস্থিতি চোখে পড়তো। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ আহত হতো ঘোড়ার ধাক্কায়। তাই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তখনকার দিনের ট্রাফিক সিগন্যালের বাতিগুলি (Truffic Signal Lights) ইলেকট্রিক্যাল ছিল না, ম্যানুয়ালি চালাতে হতো। রাস্তার বিশেষ স্থানে স্তম্ভাকৃতি পাইপ বসানো থাকতো। তার মধ্যে গ্যাস ভরে লাল অথবা সবুজ বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা ছিল। একজন পুলিশ কর্মী সর্বদা সেই পাইপে গ্যাস ভরতেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আলো পরিবর্তন করতেন।
কিন্তু গ্যাস চালিত এই ট্রাফিক লাইট (Truffic Signal Lights) অত্যন্ত বিপজ্জনক আকার ধারণ করে। একদিন একটি সিগনালিং পাইপে বড় রকমের বিস্ফোরণ হয়, তাতে আহত হন সেখানকার অপারেটর। এরপর ৫০ বছরের জন্য কার্যত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় ট্রাফিক সিগন্যালিং গ্যাস পাইপগুলিকে। এরপর ১৯২১ সালে আবিষ্কার করা হয় ৩ টি সেকশন যুক্ত ট্রাফিক সিগন্যাল। উইলিয়াম পট নামে আমেরিকার এক পুলিশকর্মী এই সিগন্যালটি আবিষ্কার করেন। এরপর ১৯২৩ সালে বিজ্ঞানী গ্যারেট মরগ্যান বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সিগন্যাল আবিষ্কার করেন। তিনি তার আবিষ্কার ৪০০০০ ডলারে বিক্রি করেন জেনারেল ইলেকট্রিকের কাছে। এরপরই সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক ট্রাফিক লাইট বসানো শুরু হয়। ব্রিটেনে পুনরায় চালু করা হয় ট্রাফিক সিগন্যাল ১৯২৯ সালে।
আরও পড়ুন ? Viral Video: গরমে ট্রাফিকে দাঁড়িয়ে পচতে হবে না, অভিনব উদ্যোগ এই শহরে
সামুদ্রিক জাহাজে লাল ও সবুজ রঙের সংকেত পূর্ণ সিগন্যালিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। এই আলো দেখেই নাবিকরা মূলত নিজেদের যাত্রাপথ স্থির করতেন। বিশেষ করে রাতের দিকে এই আলো বিশেষ উপযোগী হত। মূলত জাহাজের নেভিগেশনের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছিল প্রথম গ্যাস চালিত ট্রাফিক সিগন্যাল (Truffic Signal Lights)। সবুজ ও লাল রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ বাকি সব রঙের চেয়ে অনেক বেশি। তাই অনেক দূর থেকে এই রংগুলিকে পরিষ্কার দেখা যায়। সমুদ্রে চলাচলকারী ২ টি জাহাজ নিজেদের সংঘর্ষের হাত থেকে বাঁচাতেন এই আলোর সাহায্যেই। পুরনো দিনের লাইট হাউসগুলিতেও ব্যবহার করা হতো এই রংগুলিকে। এই রং ২ টিকে ব্যবহার করা হয় ট্রাফিক সিগন্যালের ক্ষেত্রেও।
প্রথমে গ্যাসে চালিত ট্রাফিক সিগন্যালে শুধু লাল ও সবুজ রং ছিল। পরবর্তীতে উইলিয়াম পটের আবিষ্কার করা ৩ সংকেত মূলক ট্রাফিক সিগন্যালে যুক্ত হয় হলুদ রংটিও। কারণ হলুদ রংও অনেক দূর থেকে দেখা যায়। বর্তমানে ২ ধরনের ট্রাফিক সিগন্যালিং লাইট (Truffic Signal Lights) দেখতে পাওয়া যায়। এক ধরনের, যেটিতে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের পরিস্থিতি বুঝে সিগন্যাল পরিবর্তিত হয়। অপরটি ৩০ সেকেন্ড বা ৬০ সেকেন্ড অন্তর অন্তর প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকে লাইটগুলি। তবে বিজ্ঞানীরা ট্রাফিক সিগন্যালের এই ৩ টি রং পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেছেন। কারণ এখন বাজারে বেশকিছু স্বচালিত গাড়ি আনা হয়েছে। মানব মস্তিষ্ক ৩ টি আলাদা রঙকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারলেও, মেকানিক্যাল মস্তিষ্ক তা কতটা পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই স্বচালিত গাড়িগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট আলোর ট্রাফিক সিগন্যাল সবচেয়ে ভালো।