Taxi Driver Jalaluddin built two schools by his wisdom: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প হয় না। এই কারণেই বহু মানুষ উচ্চশিক্ষায় আত্মনিয়োগ করতে চান। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের যথাযথ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকলেও পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি নানা কারণে তাদের পড়াশোনা করার ইচ্ছা অবদমিত হয়। আজ আপনাদের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে এমন একজন মানুষের সন্ধান দেব যিনি পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা সত্ত্বেও তা করে উঠতে পারেননি। তবে নিজের মনের সুপ্ত ইচ্ছা কে অপরের মনে জাগিয়ে তুলতে মানবিকতার এক অনন্য নজির হয়ে রইলেন তিনিই। একটি ভিডিও মারফত দেখা গেলো তারই জীবনের নানা অজানা কাহিনী।
যার কথা আজ এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চলেছি তার নাম জালালুদ্দিন। জালালুদ্দিন বাবু কলকাতার একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার (Taxi Driver)। একটি ভিডিওতে তার নিজের বলা কথা থেকেই জানা যায় অভাবের তাড়নায় ইচ্ছা সত্ত্বেও ছোটবেলায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি জালালুদ্দিন বাবু। অভাবের কারণে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তাকে ভিক্ষাবৃত্তিকে অবলম্বন করতে হয়। সে সময় অভাবের তাড়নায় তিনি কলকাতার এন্টালি, মৌলালি অঞ্চলের ফুটপাতে ভিক্ষা করতেন। সে ভিক্ষা থেকে উপার্জিত অর্থেই চলত তার জীবন।
পরবর্তীকালে তিনি রিক্সা ড্রাইভার হিসেবে এবং বর্তমানে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার (Taxi Driver) হিসেবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। কিন্তু তার মত অভাবের তাড়নায় যাতে আর কোনো শিশুকে পড়াশোনার পর থেকে বিচ্যুত হতে না হয় সেই কারণে তার ট্যাক্সিতে আসা আরোহীদের কাছ থেকে ভিক্ষা চেয়ে তার গ্রামে তিনি নির্মাণ করেছেন দুটি স্কুল। ১৯৯৮ সালে প্রথম একটি ঘরে ২২ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে শুরু হয় তার নির্মিত স্কুলের পথচলা। জালালুদ্দিন বাবুর এই পথ চলার সঙ্গী হয়েছেন তার স্ত্রীও।
আরও পড়ুন ? এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুল, এই পড়ুয়ার পড়ার অদম্য ইচ্ছাকে কুর্নিশ
এই ভিডিওতে তার স্ত্রীও প্রকাশ করেছেন নিজেদের স্কুল তৈরির প্রচেষ্টার কথা। তার স্ত্রীর কথা থেকে জানা যায়, দু কামরার একটি বাড়িতে যে সময় তারা থাকতেন সেই বাড়ির একটি কামরাতে তৈরি হয় জালালুদ্দিন বাবুর প্রথম স্কুল। এরপর এক কামরার স্কুল থেকে প্রথমে হয় একটি বড় স্কুল, তারপর অপর আরেকটি স্কুল এবং একটি অনাথ আশ্রম করেছেন গাজী জালালুদ্দিন বাবু। যদিও পরবর্তীকালে পৌঁছানোর পর্যাপ্ত রাস্তার অভাবে অনাথ আশ্রমটি বন্ধ করতে হয়। তবে এখনো পর্যন্ত স্কুলের জন্য যা যা কাজ করেছেন জালালুদ্দিন বাবু সবটাই সম্ভব হয়েছে তার ট্যাক্সির যাত্রী এবং বহু মানুষের দান করা অর্থে। কোনো সরকারি সাহায্যের অর্থে নয়।
নিজের স্কুল নির্মাণ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন আগে তার গ্রামে শিক্ষার বিশেষ চল ছিল না। তার নিজের কাছে থাকা একটি মাইক নিয়ে তিনি গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে থাকেন এবং শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য প্রত্যেককে আহ্বান জানাতে থাকেন। অবশেষে তার এই সুচেষ্টা সফলতা লাভ করেছে এবং বর্তমানে সমান ভাবে ছেলে মেয়ে উভয়ই এই স্কুলে পড়াশোনা করতে আসে। পরবর্তীকালে জালালুদ্দিন বাবুও তার এই মানবিক কাজের জন্য পরিচিতি পেয়েছেন। কেবিসিতেও যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অর্থ সাহায্য করেছেন অমিতাভ বচ্চনও। কেবিসি থেকে পাওয়া ২৫ লক্ষ, অমিতাভ বচ্চনের দেওয়া ২১ লক্ষ এবং আমির খান এর দেওয়া ১১ লাখ টাকা নিয়ে নরেন্দ্রপুরে জমি কিনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল খোলার কাজ বর্তমানে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।