নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘদিন তৃণমূলের বিশ্বস্ত সৈনিক থাকার পর মুকুল রায় ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি ৩ বছর ৯ মাস বিজেপিতে কাটিয়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর হঠাৎ তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করেন। তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন করার সাথে সাথেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি মূলত দলত্যাগ বিরোধী আইনের হাত ধরে এই ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু এই আইন অনুযায়ী কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব।
দলত্যাগ বিরোধী আইন ১৯৮৫ সালে ৫২ তম সংবিধান সংশোধনের সময় যুক্ত করা হয়। রাজীব গান্ধীর আমলে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল ভারতের রাজনীতিতে স্থিতাবস্থা আনার জন্য। অহরহ দলত্যাগ রুখতেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়। পরে এই আইনের আরও কিছু সংশোধন করা হয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে ২০০৩ সালে।
এই আইন অনুযায়ী কোন এক দলের আইনসভার সদস্য সরকারি কোন পদ অথবা আইনসভার সদস্য পদ ত্যাগ করে দল পরিবর্তন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে না। তবে এইগুলি পদত্যাগ না করেই দলত্যাগ করলে ওই দলত্যাগী সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যে আইনে ভর করে ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে শিশির অধিকারী এবং সুনিল মন্ডলের সাংসদ পদ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে লোকসভার স্পিকারের কাছে। এই একই পদ্ধতিতে শুভেন্দু অধিকারী মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ বাতিলের জন্য আবেদন জানাতে পারেন বিধানসভার স্পিকারের কাছে।
কিন্তু আবেদন জানালেও স্পিকার কি করবেন তা তার একান্ত সিদ্ধান্ত। কারণ এই আইন প্রয়োগের সর্বোচ্চ ক্ষমতা স্পিকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কত দিনের মধ্যে এই আইন প্রয়োগ করতে হবে তারও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারী যতই মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারি দেন না কেন স্পিকার যতক্ষণ না মনে করছেন এই আইন মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে ততক্ষণ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে।
রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেতারা যতই রাজ্যপালের কাছে দ্বারস্থ হন না কেন এই আইন প্রয়োগ করার জন্য রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের হাতে কোন ক্ষমতা নেই। এমনকি এই রাজ্যে এই আইন প্রয়োগ হয়েছে তেমন খুব একটা নজিরও নেই। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ঝাঁকে ঝাঁকে কংগ্রেস বিধায়করা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন। সেই সময়ে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই আইন কার্যকর করার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আইন কার্যকর করা হয়নি, ফেলে রাখা হয়েছিল বলে দাবি বিরোধীদের।