Hooghly Sabuj Kali: মা কালীকে আমরা চিরকালই দেখেছি নয় শ্যামবর্ণ, না হলে নীল রঙা। কিন্তু হুগলির শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রামে প্রায় ৭০ বছর ধরে হয়ে আসছে এই সবুজ মা কালির (Hooghly Sabuj Kali) পুজো। পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্রে, পশ্চিমে শ্রীপতিপুরের শান্ত গ্রামে, “সবুজ কালী” পূজা নামে পরিচিত একটি শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য উৎসব এবং রহস্যের সাথে উদযাপিত হয়। এই অনন্য ধর্মীয় পালন হুগলির হরিপাল থানায় বসবাসকারী অধিকারী বংশের ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব পরিবারের বিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত।
সবুজ কালী পূজা তার স্বতন্ত্রতার কারণে প্রচলিত কালী পূজা উদযাপন থেকে আলাদা। এখানে, শ্রদ্ধেয় মা দেবী, কালী, সবুজ পোশাকে সজ্জিত, এইভাবে তিনি “সবুজ কালী” (Hooghly Sabuj Kali) এর স্নেহময় উপাধি অর্জন করেছেন। প্রাণবন্ত সবুজ রঙ ঐতিহ্যগত কালী পূজায় এক অনন্য স্পর্শ যোগ করে। এই গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় বটকৃষ্ণ অধিকারীর। তাঁদের পরিবার ছিল গোড়া বৈষ্ণব পরিবার। ছেলেবেলা থেকেই তার পরিবারের সদস্য, এমনকি সংসারের প্রতি মন ছিল না। তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পড়াশোনা শেষ করে বাইরে চাকরি করতে চলে যান।
আরো পড়ুন: কলকাতায় মা কালির এই অদ্ভুত কয়েকটি মন্দিরে ঢুকলে গা শিউরে উঠবে আপনার।
চাকরিতেও মন না থাকায় তিনি গ্রামে ফিরে আসেন ও চাষাবাদে মন দেন। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর বিবাহ হয় পরিবারের পছন্দ করা আঙ্গুরবালা দেবীর সাথে। কিন্তু তাঁর সংসারের প্রতি কোনোরূপ দায়বদ্ধতা ছিল না। এমতাবস্থায় গ্রামে এক সন্ন্যাসীর সাথে তার পরিচয় হলে, তাঁর কাছ থেকে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন, এবং শ্মশানেই গুরুর নির্দেশে সাধনা করেন এবং তাতে সিদ্ধিলাভও হয় তার।
আরো পড়ুন: কালীপুজোতে কিভাবে পুজো হয় কালীঘাট কিংবা দক্ষিণেশ্বরে, ভোগেও বা কি দেওয়া হয়
তিনি স্বপ্নাদেশ পান বাড়িতে কালি মূর্তি স্থাপন করার। কিন্তু তার পরিবার গোড়া বৈষ্ণব হওয়ায় সহজে প্রথমে রাজি হতে চান না। তিনি কোন বারণ না শুনে প্রথমে কালির ঘট ও পরে কালি মূর্তি স্থাপন করেন। রটন্তী কালীপুজোর দিন এই সবুজ মায়ের প্রতিষ্ঠা হয়। সেই থেকেই ধীরে ধীরে এই সবুজ মায়ের আরাধারা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
স্থানীয় দের বিশ্বাস ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে মায়ের আরাধনা করলেই মনের সকল ইচ্ছে পূরণ হয়। এই মায়ের আরাধনা অন্য কালীপুজোর তুলনায় একটু আলাদা। পুজোয় মাকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় আবশ্যক ভাবে ইলিশ মাছ। এছাড়াও মায়ের পুজোতে বাজে বাঁশি। তাও রাত ৯ টা থেকে ১২ টা। এবং এই বাঁশি বাজানো হয় একটানা তিন ঘণ্টা কোনো বিরাম ছাড়া। দীপান্বিতা অমাবস্যাতে মায়ের পূজা দেখতে ভিড় জমান প্রচুর দর্শনার্থী। এই সবুজ মায়ের পুজোয় (Hooghly Sabuj Kali) কোনো প্রাণীর বলি প্রথা নেই। মায়ের প্রিয় ফুল জুঁই। তাই অন্যান্য ফুলের সাথে মায়ের সাজে না মায়ের পূজা জুঁই ফুল অত্যাবশ্যকীয়।