২০১১ সালের পর বাংলার বুকে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে একের পর এক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। সম্প্রতি গঙ্গারামপুরে হাটবাজারে দেদার বিকোচ্ছিল সবুজ সাথীর সাইকেল। আর এবার কন্যাশ্রী নিয়ে এক নতুন অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকে প্রায় সকলেই বিবাহিত। নিজেদের সন্তানও রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছেন কেউ বা নতুন করে আবেদন করছেন। অভিযোগ এসেছে ব্লক অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু কর্মী ও শাসক দলের নেতাদের দৌরাত্ম্য এর জেরে এই দুর্নীতি হচ্ছে। কন্যাশ্রীর টাকা পাইয়ে দেওয়ার নামে কয়েক হাজার করে আগাম টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে। পরে এই ঘটনার খবর আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তেই নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বাতিলের খাতায় একাধিক আবেদনপত্র। সরকারি দুই কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্বয়ং বিডিও এই তদন্তভার হাতে নিয়েছেন। দ্রুত জেলা শাসককে তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করার কথা বলা হয়েছে।
সূত্রের খবর, বিডিও এলাকায় হানা দিলেই সমস্ত ঘটনার সত্যতা সামনে আসে। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও সোনাম ওয়াঙদি লামা জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার কন্যাশ্রী প্রকল্পের বহু আবেদনপত্র নিয়ে তথ্য নিশ্চিত করতে যান মশালদহ অঞ্চলের তালগাছি ও করকরিয়া গ্রামে। তারপরই সব কিছু খোলসা হয়ে যায়। আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র খতিয়ে দেখতেই ধরা পড়ে একাধিক আবেদন ভুয়ো। তারপরই বাতিল হয় বহু ভুয়ো কন্যাশ্রী আবেদনপত্র।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে ১৮ বছরের পরে অবিবাহিত থাকলে যে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের, সেই ২৫ হাজার টাকার লোভে অবিবাহিত দেখিয়ে বিয়ের পর আবেদন করেছিলেন একাধিক বিবাহিত মহিলারা। যা তাদের কথা থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। তাদের তরফ থেকে অভিযোগ এসেছে, গত দুই মাস আগে পঞ্চায়েত ও ব্লকের কর্মীর পরিচয় দিয়ে দুই ব্যক্তি কন্যাশ্রীর আবেদনপত্র নিয়ে ফিল্ড ভেরিফিকেশনে এসেছিলেন। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে পরিবারগুলি থেকে ২-৫ হাজার টাকা আদায় করে নিয়ে গিয়েছে।ব্লক প্রশাসন তরফে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে ব্লকের কর্মীরাদের যোগ রয়েছে। ‘ফিল্ড ভেরিফিকেশনে’ গিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট ব্লকে জমা করেছেন তারা। বিডিও তাপস কুমার পাল জানিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে করা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী তথা আবেদনকারী সুকতারা খাতুনের কাকিমা বেদারা খাতুন সূত্রে জানা গিয়েছে, “তিন বছর আগে তার ভাইজির বিবাহ দিয়েছে। আমার দুই বছরের এক ছোট সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করেছিলাম। গত দুই মাস আগে ব্লক ও পঞ্চায়েতের কর্মীর পরিচয় দিয়ে দুজন এসেছিলেন। কন্যাশ্রী প্রকল্পের মোটা টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা দিয়ে তারা ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। ৩ হাজার টাকা তাদের দিয়েছি। কিন্তু তাদেরকে চিনি না।” ওই হাই মাদ্রাসার অপর এক ছাত্রী সাবনাজ খাতুনের কথায়, “গত দুই বছর আগে আমার বিবাহ হয়েছে। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এখন বাবার বাড়িতে থাকি। বিয়ের পর একাদশ শ্রেণীতে পড়াকালীন কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করেছিলাম। প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ব্লক ও পঞ্চায়েতের কর্মীর পরিচয় দিয়ে দুজন এসে ৩৫০০টাকা নিয়ে গিয়েছেন।”
জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সাহাবুদ্দীন এর তরফে জানা গিয়েছে,”পঞ্চায়েত থেকে অবিবাহিত সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। অবিবাহিত সার্টিফিকেট দেখিয়ে কন্যাশ্রী জন্য আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা। রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী পোর্টালে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র আপলোড করতে হয় স্কুলকে। ব্লকের নির্দেশ অনুযায়ী তদন্তে যায় ব্লক ও পঞ্চায়েত কর্মীরা। অনেকসময় আইসিডিএস কর্মীরা তদন্ত রিপোর্ট পাঠান ব্লকে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কিছু জানেনা। তবে বিয়ে হয়ে যাবার কথা জানতে পেরে আমি মোট ৮ থেকে ১০ টি কন্যাশ্রী আবেদন পত্র বাতিল করেছি।”