দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রেল স্টেশন হল হাওড়া। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পা পড়ে এই স্টেশন চত্বরে। আজ থেকে প্রায় একশো বছর পূর্বে মাত্র একটা ট্রেনকে সঙ্গী করে হাওড়া স্টেশনের পথ চলা শুরু হয়েছিল। তবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই স্টেশন থেকে নিয়মিত ১১ লক্ষ যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করে। পূর্ব রেলের তরফে হাওড়া স্টেশনের একশো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ডিভিশনের উন্নয়নে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ এপ্রিল হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কুমার এই বিষয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরাসরি জানিয়েছেন। ওইদিন শতবর্ষের আবহে একটি লোগো সামনে আনেন তিনি। ডিআরএম এর কথায়, হাওড়া ডিভিশনের একশো বছর উপলক্ষে এই ডিভিশনে সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও আটোসাটো করতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
রোজ নিয়ম করে হাওড়া স্টেশন থেকে গড়ে ১১ লক্ষ যাত্রী রেলের পরিষেবা উপভোগ করেন। যার মধ্যে অধিকাংশ শহরতলির লোকাল ট্রেনের যাত্রী। আর স্বল্প শতাংশ যাত্রী দূরপাল্লার ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে থাকে। হাওড়া স্টেশনে রোজ ১৬১ জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ৪৫ জোড়া দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল করে।
ট্রেন পরিষেবাকে আরও ঢেলে সাজাতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হাওড়া স্টেশনে নয়া একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠবে। তা নিয়ে মোট প্ল্যাটফর্ম সংখ্যা এসে দাঁড়াবে ২৪ এ।
এছাড়াও একাধিক কর্মসূচীর অঙ্গ হিসেবে পুরনো ডিআরএম অফিসের বদলে রেল মিউজিয়াম এর পাশে গড়ে উঠছে নতুন ডিআরএম অফিস। আগামী দুই মাসের মধ্যেই এই কাজে হাত লাগাবে রেল। তাছাড়াও আগের থেকে আরও দ্রুত গতিতে এবং সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচলের জন্য হাওড়া স্টেশনে প্রবেশের মুখে চাঁদমারি সেতুর সাথেই বেনারস রোড ব্রিজ নতুনভাবে গড়ে উঠছে। চলতি বছরের মধ্যে ওই কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদী রেল। অন্যদিকে, কর্মসূচীর অঙ্গ হিসেবে অমৃত ভারত প্রকল্পের অধীনে হাওড়া ডিভিশনের ১৫টি স্টেশনকে আরও উন্নত মানের করে তোলার চেষ্টা করছে রেল।
যার মধ্যে ব্যান্ডেল স্টেশনে একটি অত্যাধুনিক কোচিং ডিপো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যার ফল স্বরূপ উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতে অনেক বেশি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। আবার নতুন এক কর্মসূচী হিসেবে হাওড়া ডিভিশনের সূচনার একশো বছরকে স্মরণীয় করে তুলতে পূর্ব রেলের শতবর্ষের বিভিন্ন ঘটনার ছবি, পোস্টার সহ পুরস্কারের ছবি প্রভৃতি দিয়ে একটি লোকাল ট্রেনের বগিকে সাজিয়ে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে। অন্যদিকে একটি স্মরনিকা প্রকাশিত হবে নানান সাফল্যের কথা তুলে ধরতে। আবার বিলাসবহুল রাজধানী এক্সপ্রেসের একটি ইঞ্জিনকে এই আনন্দে সুসজ্জিত করে সাজিয়ে তোলা হবে।
পাশাপাশি একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি পোস্টাল কভার প্রকাশিত হবে। হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম সঞ্জীব কুমারের তরফে আরও জানা গিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার লক্ষে হাওড়া স্টেশন আরও উন্নত মানের সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে। হাওড়া, ব্যান্ডল ও কাটোয়ায় মহিলা আরপিএফ কর্মীদের ব্যারাক তৈরি করা হচ্ছে। বলা চলে, পূর্ব রেলের শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে গোটা বছর জুড়ে একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রেল। যা কার্যকর রেল কর্তারা করার লক্ষে মাঠে নেমেছেন।