মানুষ তার রোজগারের কিছুটা অংশ সঞ্চয় করে রাখেন যাতে তা ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। এই সঞ্চয়ের কী কোনও সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব? স্বাভাবিকভাবেই যে যেমনভাবে যতটা খুশি সঞ্চয় করতেই পারে। তবে সঞ্চয় এর বিষয়কে যতটা সহজ বলে মনে হয় বাস্তবে কিন্তু তেমন নয়। সমাজে সকল ব্যক্তি সৎ, নৈতিক ভাবে উপার্জন না করায় সঞ্চয়ের সঙ্গে অনৈতিক উপার্জনেরও প্রশ্ন ওঠে। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানান ব্যাঙ্কের নানান নিয়ম।
একথা সত্যি যে বর্তমানে ডিজিটাল লেনদেন এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক বিষয় সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অধিকাংশ মানুষ সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী হচ্ছে। তবে হাতে গোনা মানুষই এই বিষয় সম্পর্কে অবগত যে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সীমা রাখা হয়েছে যা পার করলেই আয়কর বিভাগ তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে ওই নির্দিষ্ট সেভিংস একাউন্ট খুঁটিনাটি তদন্ত শুরু করবে এবং পরবর্তীতে মোটা টাকা জরিমানাও গুনতে হতে পারে ব্যাক্তিকে।
এই সংক্রান্ত বিষয়ে তাই আবারও শিরোনামে উঠে এসেছে আরবিআই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কিছু নিয়ম লাগু করেছে, নিয়ম অনুযায়ী জনৈক ব্যক্তি একটি আর্থিক বছরে তার সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা জমা রাখতে পারেন। এই নগদ টাকার সীমা পার করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের বোঝা চাপে না একথা ঠিক, তবে কর কর্তৃপক্ষের কাছে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কিন্তু আবশ্যক।
যে ব্যাঙ্ক বার্ষিক তথ্য রিটার্ন কাঠামোর আওতায় রয়েছে তার আয়কর বিভাগকে বেশি মূল্যের নগদ লেনদেনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া আবশ্যক। যদি কোনও ব্যক্তির সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকার সীমা অতিক্রম হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিকে সেই টাকা কোথা থেকে এসেছে তার সঠিক উৎস ব্যাখ্যা করতে হবে। বিশেষত যদি তা তার বার্ষিক আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়। এই জন্য যথেষ্ট প্রমাণ জমা করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। প্রমাণ জোগাড়ে অসফল হলে কড়া তদন্তের মুখে পড়তে হতে পারে। এছাড়া ওই হিসাব না মেলাতে পারা অর্থের উপর ৬০% পর্যন্ত কর ধার্য হতে পারে।
ব্যাঙ্কে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ এর বেশি টাকা জমা রাখলে প্যান কার্ড দেখানো জরুরি। সাধারণত ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত নগদ জমা করার ক্ষেত্রে প্যান কার্ড দেখানোর দরকার নেই, এই পরিমাণের বেশি টাকা জমা রাখতে হলে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম তৈরির অন্যতম উদ্দেশ্য হল হিসাব বহির্ভূত সম্পদের ওপর নজরদারি এবং ব্যাঙ্কিং চ্যানেলের মাধ্যমে সম্ভাব্য অর্থ পাচার রোধ করা।
অন্যদিকে যেকোনো ইলেকট্রনিক গেজেট যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, বা ক্যামেরার মতো দামী জিনিসপত্রের রসিদ রেখে দেওয়া প্রয়োজন। আয়কর মূল্যায়নের সময় এই রসিদগুলি প্রয়োজনীয় নথি হিসেবে কাজ করে, বিশেষত যখন এই জাতীয় পণ্যের মূল্য কারও রিপোর্ট করা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয় না। উল্লেখ্য ব্যক্তির সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা থাকা কোনোভাবেই অবৈধ নয়, তবে আরবিআই এর নিয়ম লঙ্ঘন করা উচিত নয়।
বার্ষিক আয়ের সঙ্গে ব্যাঙ্কে জমা করা আয়ের পার্থক্য থাকলে তদন্তের প্রশ্ন তো উঠবেই। তাই তদন্তের দায়ে থেকে মুক্ত থাকতে আয়ের উৎসের স্পষ্টতা বজায় রাখা প্রয়োজনীয় এবং দরকারে ট্যাক্স রিটার্নে উচ্চমূল্যের লেনদেনের কথাও ব্যক্ত করে দেওয়া উচিৎ।