সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা বিতান অধিকারী। তারপরই গত বুধবার প্রশাসনের প্রচেষ্টায় তিন বছরের ছেলে হৃদানকে নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন বিতানের স্ত্রী সোহিনী অধিকারী। তারপর থেকেই একের পর এক বিতর্ক শুরু হয়েছে সোহিনীকে ঘিরে। রাজনীতির রংবাজিও রয়েছে এই বিতর্কের মধ্যে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে বিতানের পরিবারের তরফে দাবি উঠেছে বিতানের স্ত্রী সোহিনী নাকি ‘বাংলাদেশী’।
তবে সোহিনীর দাদা এই দাবিকে নস্যাৎ করে জানিয়েছেন তার বোনকে নিয়ে সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে সোহিনী ও তার বাচ্চা ছেলে পা রাখার পরে রাজ্যের মন্ত্রী থেকে বিধায়কদের যেমন দেখা গিয়েছিল তেমনই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ আরও কয়েকজন বিজেপি ব্যক্তিত্ব। সোহিনীর তরফে শুভেন্দুকে জানানো হয়, হিন্দু চিহ্নিত করে তার স্বামী বিতানকে গুলি করে মেরেছে জঙ্গিরা। তিনি শুভেন্দুর ভরসায় কলকাতায় ফিরে এসেছেন।
আরও পড়ুন: LPG: LPG সিলিন্ডার পেতে হতে পারে বড় সমস্যা! ধর্মঘটে কী মিলবে সুরাহা?
ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শুভেন্দু, অগ্নিমিত্রা পালরা সোহিনীর সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পাটুলির বাড়িতে যান। শুভেন্দু এর তরফে জানা গিয়েছে, প্রায় আধ ঘণ্টা সময় ধরে সোহিনীর সঙ্গে তার কথাবার্তা হয়েছে। তবে যা কথা হয়েছে তা সকলের সামনে প্রকাশ করা যাবে না এবং তারা সোহিনীর পাশে রয়েছেন। আবার এই বিতর্কের মাঝেই নিহত বিতান অধিকারীর নামে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করা এবং সেখানে বেনিফিশিয়ারি হিসাবে সোহিনীর নাম থাকা নিয়ে আড়াআড়ি ভাগ হয়েছেন নেটাগরিকেরা।
এরই মাঝে বিতানের দাদা বিভু দাবি করেছেন সোহিনী ভারতের নাগরিক নন। পেশায় আইনজীবী বিভুর এর তরফে জানানো হয়েছে, “ওর পরিচয় দিতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে।’’ আবার ভাইয়ের বউকে ‘ইন্টারন্যাশনাল জালিয়াত’ বলে উল্লেখ করতেও ছাড়েননি তিনি। বিভু এর তরফে আরও জানা গিয়েছে, দু বছর আগে সোহিনী অধিকারী এবং তার মা ভারতী রায়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন। তার মা ভারতী যদিও বাংলাদেশ চলে গিয়েছেন। কিন্ত ভারত থেকে তার মেয়ে বিদায় নেয়নি।
বিভুর তরফে দাবি উঠেছে, সোহিনী তার আসল পরিচয় গোপন করে বিতান অধিকারীকে বিয়ে করেছিলেন। বিভু আরও জানান, ‘‘সোহিনীর আসলে দুটো জন্ম শংসাপত্র রয়েছে। উনি আসলে ভারতের নয়, বাংলাদেশের নাগরিক। পরবর্তীতে সোহিনীরা এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় নথি বানিয়েছিলেন। পরে প্রমাণ হয়েছিল সেগুলি আসল নয়।’’ তার বক্তব্যে আরও স্পষ্ট হয়, ‘‘উনি আগে বিতানের সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখনও এ দেশে আছেন। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে সোহিনীর ভারতীয় পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কলকাতার পাটুলিতে একটি বাড়িতে বসবাস করেন বিতানের বাবা-মা। অপর একটি বাড়িতে থাকেন তার স্ত্রী-পুত্র। বিতানের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, সোহিনী যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়ির অবৈধ মালিক তিনি। কারণ নকল কাগজপত্র দিয়ে তার মা ওই বাড়িটি কেনেন। পরবর্তীতে মেয়েকে উপহার স্বরূপ বাড়িটি দিয়েছিলেন তিনি।