সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে একের পর এক উদ্যোগ সামনে আসছে।২০১৮ সালে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘাতেও জগন্নাথ মন্দির গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সপ্তাহখানেকের একাধিক রীতিনীতি পালনের শেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বুধবার অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনে খুলে গিয়েছে দিঘায় নব নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে উদ্বোধন হয়ে গেল জগন্নাথ মন্দিরের। মন্দির চত্বর ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি দিঘার জগন্নাথদেবের জন্য ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়। কী কী নিবেদন করা হয় ৫৬ ভোগে?
অন্ন, ঘি ভাত, সুগন্ধী ভাত, পান্তা ভাত, নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত, দুধভাত, দহি পাখাল, শুকনো খিচুড়ি, ডাল, করলা ভাজা, শাক ভাজা, লাবড়া, বেসর, লঙ্কার বড়া, নিমকি, আদার চাটনি, মিষ্টি চাটনি, নারকেল নাড়ু, সুজি, দই, বোঁদে, পুলি পিঠে, পিঠে, ছোট পিঠে, বিড়ি পিঠে, পদ্ম পিঠে, ক্ষীরের মিষ্টি, ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি, প্যান কেক, নারকেল কেক, রাইস কেক, বড় কেক, কেক, সাকারা, মেন্ধা মুন্ডিয়া, কাদামবা, পাত মনোহর মিষ্টি, তাকুয়া মিষ্টি ভাগ, পিঠে, কাকারা মিষ্টি, লুনি খুরুমা, মিষ্টি লুচি, চাড়াই নাড়া মিষ্টি, খাস্তা পুরি, কাদালি বারা, কানজি, বড় আরিশা, ত্রিপুরি, মুগা সিজা, মনোহরা মিষ্টি, মাগাজা লাড্ডু, খোয়া ক্ষীর, মিষ্টি, পানা, মুড়ি, দলমা, টুকরো করা কলা।
দিঘার বুকে তৈরি হওয়া জগন্নাথ মন্দিরকে যাতে পুরীর মন্দিরের থেকে কোনও অংশে কম না লাগে সেই কথা মাথায় রেখেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। দিঘার জগন্নাথ মন্দির তৈরির জন্য রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মরু শহর রাজস্থান থেকে কমপক্ষে ৮০০ কারিগর দিঘায় এসে মন্দির নির্মাণের কাজে হাত লাগিয়েছেন। মন্দিরের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেই প্রথমে তিনটি দীপস্তম্ভ পড়বে।
যেহেতু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই এই মন্দির নির্মাণ কাজ হয়েছে তাই দিঘার মূল মন্দিরেও প্রবেশের জন্য চারটি দ্বার রয়েছে। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বার বা মন্দিরের প্রবেশদ্বারের সামনে রয়েছে কালো রঙের অরুণ স্তম্ভ। কালো পাথরে নির্মিত এই অরুণ স্তম্ভটি ৩৪ ফুট লম্বা ১৮ মুখী। এই স্তম্ভের মাথায় অবস্থান করছে অরুণা মূর্তি।
সিংহদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলেই ঠিক পুরীর কথা মনে পড়বে, কারণ এখানেও সোজাসুজি জগন্নাথের মূর্তির দর্শন মিলবে। সিংহদ্বারের বিপরীতে রয়েছে ব্যাঘ্রদ্বার। উত্তরদিকে হস্তিদ্বার ও দক্ষিণদিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অশ্বদ্বার। ভোগ মণ্ডপটি রয়েছে দিঘার মন্দিরের প্রথমে। এই ভোগ মণ্ডপে রয়েছে মোট চারটি দ্বার।এরপরেই দেখা মিলবে ১৬টি স্তম্ভের উপরে নাটমন্দিরের।
নাটমন্দিরের পরে চারটি স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে আছে জগমোহন।জগমোহনের পরেই আবার গর্ভগৃহ বা মূল মন্দির রয়েছে। সেখানে সিংহাসনে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি বসে রয়েছে। মন্দিরের পাথরের দেওয়ালেও অসংখ্য কারুকার্য করা হয়েছে মন্দিরকে সু সজ্জিত করে তুলতে। ভগবান জগন্নাথদেবের ভোগ রন্ধনের আলাদা ভোগশালার ব্যবস্থা রয়েছে। এক কথায় পর্যটন কেন্দ্র ও আধ্যাত্মিকতা যেন মিলে মিশে এক হয়ে গেল।