Kaleswar Shiv Mandir: জানুন অজানা কাহিনি কলেশ্বর-কলেশনাথকে নিয়ে

Kaleswar Shiv Mandir: বীরভূমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে একাধিক শিবমন্দির। মন্দিরগুলির জনপ্রিয়তা জনমানসে ধরা না পড়লেও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বীরভূমের কলেশ্বর-কলেশনাথ মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা অলৌকিক ঘটনা, এটি নিছক গালগল্পের মতো শোনালেও, ভক্তসমাজের কাছে তা পরম পবিত্রতায় পূর্ণ। কীভাবে এই মন্দিরটি সুদীর্ঘ কালের চড়াই উতরাই পেরিয়ে সাধক মুনি-ঋষির মন্দির থেকে কলেশ ঘোষের মন্দির, তার পরে রাজা রামজীবনের মন্দির থেকে স্বামী দ্বারিকানাথ দেবতপস্বীর মন্দির আর সবশেষে আমাদের সকলের মন্দির হয়ে উঠল সেটাই আসল রহস্য।

সাঁইথিয়া শহর থেকে প্রায় বারো মাইল পূর্বে রয়েছে কলেশ্বর নামের গ্রাম। কলেশ্বরের এক মাইল উত্তরে সাঁইথিয়া-বহরমপুর বড় রাস্তা, অতীতে যা মিলিটারি রোড নামে পরিচিত ছিল। যদিও ইন্টারনেটে নাম ‘টাইপ’ করা মাত্রই সহজে পাওয়া যায় পথ নির্দেশিকা। বর্তমান কলেশ্বর-কলেশনাথ মন্দিরের (Kaleswar Shiv Mandir) উচ্চতা একশো ফুটেরও বেশি। ফাল্গুন মাসে শিবচতুর্দশী তিথিতে শৈবতীর্থ কলেশ্বর ধামে শিবরাত্রি ব্রত উৎসব পালন করা হয়। এরসাথে হয় সাত দিন ব্যাপী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মন্দির শীর্ষে এ সময় মানুতে ধ্বজা বাঁধা হয়। হাজার হাজার দর্শনার্থীর জন্য আয়োজন করা হয় ভোগের। ভক্ত মানুষের দান-অনুদানে এই মহোৎসব হয়। শুধু শিবচতুর্দশী নয় সারা বছরই পুণ্যার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে কলেশ্বরে।

এই মন্দিরের আবির্ভাব ও বিস্তৃতি নিয়ে নানা সময় নানা কিংবদন্তি, জনশ্রুতি, লোককথা প্রচলিত আছে। বহুমানুষ বিশ্বাস করেন, মুনি ঋষির সাধনাক্ষেত্র ছিল কলেশ্বর ধাম। পর্বত নামে এক ঋষি এখানে দেবী পার্বতীর তপস্যায় রত ছিলেন। তাঁরই নামানুসারে গ্রামের নাম ছিল পার্বতীপুর। আবার লোকমুখে শোনা যায়, ধানঘড়া গ্রামের কলেশ ঘোষ পুজো করে শিবকে তুষ্ট করেন। চন্দ্রচূড় নামক পুথিতে কলেশ্বর ধামকে মৎস্য দেশে অবস্থিত মায়াতীর্থ রূপে অভিহিত করা হয়েছে। কলেশ ঘোষের মাধ্যমে কলেশ্বর-কলেশনাথ শিবের পুনঃপ্রকাশ ঘটে। বর্তমানে এটি কলেশ্বর মন্দির (Kaleswar Shiv Mandir) নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে স্থানীয় ঢেকার স্বাধীনচেতা নরপতি রামজীবন রায় মন্দিরটি সংস্কার বিষয়ে মনোনিবেশ করেন। রাজা রামজীবনের নানা কীর্তি অদ্যাপি বীরভূমকে উজ্জ্বল করে রেখেছে। তার মধ্যে চণ্ডীপুরে তারা মায়ের মন্দির, বিরাট রামসাগর সরোবর, চিরঞ্জীব দিঘি, শিবসাগর উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন: শিবপুজোতে শুধু উপোস করলেই হবে না, জানুন পুজো করার সঠিক পদ্ধতি

কৃষির সুবিধার জন্য বানানো হয়েছিল সরোবরগুলি, তবে মাস খানেক আগেও ঢেকা গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় খননকার্যের সময় উদ্ধার হয়েছে রাজপরিবারের ব্যবহৃত কিছু অমূল্য পূজা সামগ্রী, সঙ্গে একটি পাথরের গৃহদেবতার প্রতিমূর্তি। গ্রামবাসীদের অনেকেই মনে করেন, প্রাচীন শিব মন্দিরের পশ্চিম দিকে এক সুড়ঙ্গ-পথ ছিল। রাজা মন্দিরের সেবা পূজার জন্য বহু ভূসম্পত্তি দান করে গিয়েছেন। কিন্তু তার সিংহভাগই বর্তমানে বেহাত হয়ে গিয়েছে। প্রায় ১০৯-১১০ ফুট উঁচু মন্দিরটি তৈরি করতে করতে লক্ষাধিক ব্যয় করা হয়েছিল। আর্থিক সাহায্যে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন মুর্শিদাবাদ জেলার রাজাধিরাজ ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায়। প্রায় দু’মণ ওজনের পার্বতীমাতার অষ্টধাতুর মূর্তিটি তিনি দান করেন।

১৩৪৭-এর ২৮ শে মাঘ, মাঘী পূর্ণিমার দিন কলেশনাথের নতুন শিবমন্দির সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।উঁচু মন্দিরটির গর্ভগৃহে কিন্তু আপনাকে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রবেশ করতে হবে, হয়তো মন্দিরগুলির প্রবেশদ্বার এই রকম রাখা হয় যাতে শ্রদ্ধা ভক্তিতে মাথা নত হয়ে প্রবেশ করতে হয় অনাদি দেবের কাছে। মূল গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গকে ঘিরে দেখা মিলবে আকর্ষণীয় শিল্পনৈপুণ্যের। বিশাল এই কলেশ্বর মন্দিরের (Kaleswar Shiv Mandir) স্থাপত্য রীতি ও বৈচিত্র পরিচয় দেয় শিল্পী মননের দক্ষতা এবং নান্দনিক মূল্যবোধের। সরকারি সাহায্যে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তবে এখনও বিভিন্ন দিক থেকে অবহেলিত কলেশনাথ মন্দির। কলেশ্বরকে পর্যটন মানচিত্রের অর্ন্তভুক্ত করা হলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে, এলাকার অর্থনৈতিক রূপ বদলে যাবে। গ্রামবাসীদের এটাই বড় স্বপ্ন। পর্যটক হিসাবে ঘুরে আসতে পারেন জায়গাটি থেকে। আশা করি নিরাশ হবেন না।