যে আইনের আওতায় লকডাউনে খোলা হচ্ছে দোকান, রইলো সেই আইনের খুঁটিনাটি

নিজস্ব প্রতিবেদন : লকডাউন চলাকালীনও বেশকিছু দোকান খোলার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথা হচ্ছে, সেখানে বারবার একটি কথা উল্লেখ করা হচ্ছে ‘শপস অ্যান্ড এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট’-এর আওতায় রেজিস্টারড থাকা দোকানগুলির কিছু দোকান খোলা যাবে। তবে মনে রাখতে সব দোকান নয়, কিছু কিছু দোকান। কোন কোন দোকান খোলা, কোন এলাকায় খোলা যাবে, কোন কোন দোকান খোলা যাবে না তার তালিকা আগেই দিয়ে দিয়ে কেন্দ্র সরকার। তবে ‘শপস অ্যান্ড এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট’ এটি আসলে কি?

‘শপস অ্যান্ড এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট’, যে আইনে ছোট ছোট দোকান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার জন্য প্রচলিত ক্ষুদ্র বাণিজ্য ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আইনকে (১৯৬৩) (পশ্চিমবঙ্গ) বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

এই আইনের উদ্দেশ্যই হল ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাসিক, সাপ্তাহিক বা প্রতিদিনের মাইনে, কাজের সময়, উৎসবের জন্য ও কর্মীদের অন্যান্য ছুটি ঠিক নির্ধারণ ঠিকমত পরিচালিত করা। বর্তমানে এই আইনে কিছু বাধ্যতামূলক প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের নিশ্চয়তা, নানা প্রকার সহায়তা দিতে হবে কলকাতা ও রাজ্যের সব মালিকপক্ষদের।

এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে কর্মরত মহিলা ও অল্পবয়স্ক কর্মীদের বাৎসরিক ছুটি, মাসিক মাইনে ও অফিস খোলা ও বন্ধের সময় লিখিত আকারে জানিয়ে দিতে হবে। এই আইন প্রয়োগ হবে কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানগুলিতে।
২(২), ২(৫), ২(৬) ধারাগুলি রাজ্যের সকল ক্ষুদ্র বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করা যাবে।

ক্ষুদ্র বাণিজ্য সংস্থা বলতে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে সমস্ত রকম মাল খুচরো ও পাইকারি হারে বিক্রি হয়। এছাড়াও এর মধ্যে পড়বে অফিস, স্টোর হাউস, গুদামঘর বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রগুলি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বলতে যেগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, তা হল বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে জনগণের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বলতে যেগুলি ধরা হয়েছে সেগুলি হল ব্যাঙ্ক, ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন যেখানে কর্মীরা কর্মরত, হোটেল, বোর্ডিং, রেষ্টুরেন্ট, খাদ্য পরিষেবা সংস্থা, ক্যাফে, বিনোদন মূলক রিসোর্ট, থিয়েটার বিনোদন মূলক রিসোর্ট, থিয়েটার, সিনেমা, সকল রকম মনোরঞ্জনের প্রতিষ্ঠান।

এই আইনের ৪ নং ধারায় যেসব প্রতিষ্ঠানে এই আইন কার্যকর হবে না, সেগুলি হল রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত অফিস, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, রেল দপ্তর ও সকল রকম স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা।

এছাড়াও রেলের পরিষেবা, বিমান পরিষেবা, জল পরিষেবা, ট্রাম ও মটর সার্ভিস, জনস্বার্থ পরিষেবা, স্যানিটাইজেশন, সমস্ত রকম শিল্প সংস্থা, বাণিজ্য সংস্থা যেগুলি শক্তি, আলো, জল সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও সেইসব প্রতিষ্ঠান যেগুলি অসুস্থ, দুর্বল, বিকলাঙ্গ, অক্ষম ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের পরিষেবা দেয়। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান, মেলা ও বাজার যেগুলি বাণিজ্যক উদ্দেশ্য ছাড়া সহায়তা দেয়। রেল, ডক ও বিমান বন্দরের বিশ্রাম ও আশ্রয়স্থলগুলি।

ধারা ১৬ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের সকল ক্ষুদ্র বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠানগুলির ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন আবশ্যক।

রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কি কি লাগবে

১. ক্ষুদ্র বাণিজ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নাম।

২. সংস্থার মালিকের নাম।

৩. প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও অন্যান্য যা কিছু দিতে বলা হয়েছে।

রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ সেগুলি পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেবে নিয়ম অনুযায়ী। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে তা দেখার অধিকার থাকবে। সার্টিফিকেটগুলির ব্যবহারের সময় পেরিয়ে গেলে নতুন করে রিনিউ করতে হবে।

রেজিস্ট্রেশন ফর্মে পরিবর্তন করতে চাইলে ১ সপ্তাহের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হলে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে ১৫ দিনের মধ্যে। গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশের মধ্যে ১২ বছরের নীচে অল্প বয়স্কদের কাজে লাগানো যাবে না ধারা ৯ অনুযায়ী। কাজের ক্ষেত্রে ধারা ৭ ও ৮ অনুযায়ী নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে ৮ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। বয়স্ক ব্যক্তিদের ৫ ঘন্টার বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ৫ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না যদি না ১ ঘন্টার বিশ্রাম দেওয়া না হয় দিন হিসাবে।

দিন হিসাবে কাজ দশ ঘন্টার বেশি করানো যাবে না। ১২ ঘন্টা করলে চিফ ইন্সপেক্টরের অনুমতি লাগবে। অল্প বয়স্কদের দিনে ৭ ঘন্টা বা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না।

ধারা ১৪ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিশ্রমরত সকল কর্মরত কর্মীদের মাইনে দিতে হবে সময় নির্ধারিত মাইনে দেওয়ার দশ দিন আগেই।

প্রতিষ্ঠানের ছাঁটাই কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাপ্য মাইনে দিয়ে দিতে হবে।

ধারা ১৩ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করালে কর্মীদের ঘন্টা পিছু দ্বিগুন মাইনে দিতে হবে। স্বাভাবিক কাজের দিনের নির্দিষ্ট মাইনে দেওয়ার তুলনায়।

নির্ধারিত মাইনে থেকে টাকা কমালে ও ছয় মাস ধরে মাইনে না দিলে এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই সংক্রান্ত বিষয়ক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকারিকদের কাছে অভিযোগ দিতে পারবেন।

আধিকারিকরা পরীক্ষা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

যেসব কারণে কর্মীদের মাইনে দিতে দেরি হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তিগ্ৰাহ্য সমস্যা, বিতর্ক ও গুরুত্বপূর্ণ কোন সমস্যা দেখা দিলে এই আইনে কর্মীরা ছুটি পাবেন। বিশেষ ছুটি ও ক্যাজুয়াল লিভ।

সমস্ত ক্ষুদ্র বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজ্য সরকারের ইন্সপেক্টর প্রবেশ করতে পরীক্ষা করতে, তথ্য যাচাই করতে ও পানিশমেন্ট করার অধিকারি থাকবে।

বিচার বিভাগের ক্ষেত্রেও বেশ আইন প্রয়োগ করা হয়েছে এই নতুন নিয়মে।

এই বিশেষ পরিস্থিতিতেই এই নিয়মগুলি কার্য করা হবে কলকাতা সহ জেলার প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলিতে।