রোজের একঘেয়ে জীবন থেকে একটু ছুটি পেলেই মন ছুঁয়ে দেখতে চায় তুলির টানে আকা শান্ত মনোরম পরিবেশকে। আর ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে নতুন নতুন জায়গার সন্ধান পাওয়া যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার সমান। তবে আজ যে জায়গার সন্ধান দেবো তা সেই রাজ্য সম্পর্কে সকলে অবগত হলেও সে রাজ্যের বুকে গড়ে ওঠা এই নতুন পর্যটন কেন্দ্র কিন্তু তাদের কাছে অজানা বা নতুন বলা যেতে পারে। কোন জায়গার কথা বলছি? ‘সাদা পাহাড়ের’ কথা বলছি। হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি! পর্যটন শিল্পের মাথায় নতুন পালক হিসেবে জুড়তে চলেছে এবার বেলপাহাড়ির ‘সাদা পাহাড়’।
পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হতে চলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সুদেব বেরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই ‘সাদা পাহাড়’-এর ছবি ছড়িয়ে দেন, আর তাতেই কৌতূহলী হয়ে কিছু পর্যটক নতুন এই গন্তব্যের খোঁজ পান। সাধারণ মানুষের মুখে ‘সাদা পাহাড়’ নামে পরিচিত হলেও, স্থানীয় বাসিন্দারা একে ‘চাতন ডুংরি’ নামে জানেন। বেলপাহাড়ি ভ্রমণের পথে কাঁকড়াঝোর যাওয়ার সময়, বোদাডিহি মোড়ে পৌঁছে ডানদিকে ঘুরে প্রায় তিরিশ মিটার উঁচু টিলার ওপর উঠলে এই সাদা পাহাড়ের দেখা মেলে।
আরও পড়ুন: দেশের নিরাপত্তায় এক নতুন অধ্যায়! ভারত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের জয়ে আনল বিরল সাফল্য
স্থানীয়দের দাবি, বেলপাহাড়ির অন্য কোথাও এমন ধবধবে সাদা পাথরের পাহাড় চোখে পড়ে না। বোদাডিহা গ্রামের বাসিন্দা নিরাপদ মাহাতো জানান, “এটি ছোট্ট একটি পাহাড়, আমরা একে চাতন ডুংরি বলি। এর পাথরগুলি দুধের মতো সাদা। কিছু পর্যটক এখন খোঁজ নিয়ে এখানে আসেন, তবে এখনও পর্যন্ত খুব বেশি মানুষের কাছে এটি পরিচিত নয়।”
কলকাতার যোগমায়াদেবী কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা কিশোর দণ্ডপাটের তরফে জানা গিয়েছে, “এটি মূলত কোয়ার্টজ়াইট শিলা। জেলার মধ্যে শুধুমাত্র বেলপাহাড়ির বোদাডিহি মোড় সংলগ্ন এই টিলার ওপরেই এমন পাথর দেখা যায়। আমি নিজেও প্রথম দেখে অবাক হয়েছিলাম। পর্যটকরা যদি এই মনোরম স্থানটির খোঁজ পান, তাহলে ঝাড়গ্রামের পর্যটন মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে।” বেলপাহাড়ি যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা এক অনুপম ছবি। সবুজ জঙ্গল, পাহাড়, ঝর্না আর পড়ন্ত সূর্যের সোনালি আভায় মুগ্ধ করে পর্যটকদের।
ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন দপ্তরের আধিকারিক মহম্মদ আলিম আনসারির মতে, “জেলার বিভিন্ন পর্যটনস্থলগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করে পর্যটকদের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। ঝাড়গ্রামের সৌন্দর্যের মূল কেন্দ্রস্থল হলো বেলপাহাড়ি। যেখানে পাহাড়, নদী, জলপ্রপাত আর ঘন জঙ্গলের এক অপূর্ব মিশেল রয়েছে। আশা করছি, ‘সাদা পাহাড়’-ও পর্যটকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।”