বীরভূমের মিষ্টির জগতে যেমন সিউড়ির মোরব্বা নামজাদা, তেমনই আরেক বিখ্যাত নাম হলো তাঁতিপাড়ার জিলিপি। জেলাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই জিলিপির সুখ্যাতি এখন রাজ্য ছাড়িয়ে পৌঁছেছে ঝাড়খণ্ড-বিহার পর্যন্ত। কালো বিড়ি কলাই, আতপ চালের গুঁড়ো ও নিপুণ কারিগরির সংমিশ্রণে তৈরি হয় এই জিলিপি। দেখতে খানিকটা ফ্যাকাসে সাদা, কারণ এতে কোনও কৃত্রিম রঙের ব্যবহার হয় না। তৈরির প্রক্রিয়াটিও দীর্ঘ, কলাই শুকিয়ে সারারাত ভিজিয়ে খোসা ছাড়ানো, তারপর শিলনোড়ায় বাটা ও চালের গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে ভেজে ঠান্ডা রসে ডোবানো হয়। ফলাফল, বাইরে মুচমুচে, ভিতরে রসে ভরা, মুখে গলে যাওয়া এক অপূর্ব স্বাদ।
তাঁতিপাড়ার হাটতলার সুমন রুজ আজও বাবার কাছ থেকে শেখা সেই পুরনো রীতিতে জিলিপি তৈরি করেন। তিনি জানান, “আমাদের জিলিপি কালো কলাই দিয়ে তৈরি। দিনে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি বিক্রি হয়। উৎসবের সময়ে বিক্রি বেড়ে ৪-৫ কুইন্টাল পর্যন্ত পৌঁছে যায়।” বর্তমানে জিলিপির দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা।
আরও পড়ুনঃ ছাগলে ধান খাওয়াকে ঘিরে তৃণমূলের চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! প্রাণ গেল একজনের
স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু ধীবর বলেন, “তাঁতিপাড়ার জিলিপি এক নম্বর জিলিপি। বহু দূর থেকে মানুষ আসে এই জিলিপি কিনতে। এটা আমাদের গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য।” দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটার মতো উৎসবে এই জিলিপির কদর আরও বেড়ে যায়। কুটুম বা অতিথি এলেই তাঁতিপাড়ার বাসিন্দারা গর্ব করে দেন তাঁদের বিখ্যাত জিলিপি।
বীরভূমের এই মিষ্টি শুধু একটি খাবার নয়, এটি এক ঐতিহ্য, এক স্বাদে ভরা ইতিহাস, যেখানে কলাই, কারিগরি আর সংস্কৃতির মিশেলে জন্ম নিয়েছে “তাঁতিপাড়ার জিলিপি”।
