সিংহাসন দখলে নেমে হারতে হয়েছে বাংলার যেসকল মুখ্যমন্ত্রীদের, রইলো তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদন : নবান্ন লড়াইয়ের ‌দখলে ২০২১ এও যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের কেন্দ্রে থাকবে নন্দীগ্রামের আসন। কারণটা খুব স্পষ্ট, এই আসনেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র বলে দাবি করা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী।

নন্দীগ্রামে কে‌ জিতবেন তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই নানান জল্পনা চলছে। নন্দীগ্রামের আসন নিয়ে চিন্তা করার আরও একটি কারণ হলো এই রাজ্যের অতীত ইতিহাস। রাজ্যের অতীত ইতিহাস বলছে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কেউ পরাজিত হলে তার দল‌ও সরকার গড়তে অক্ষম হয়েছেন।

প্রফুল্ল সেন

১৯৬২ সালের ১ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের প্রয়ানের পর তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্বের সাথে খাদ্য দপ্তর‌ও সামলাতেন। তার সময় বাংলা জুড়ে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। তখন একদল অসাধু ব্যবসায়ী শস্য মজুদ করে ব্ল্যাক করলে মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন রেশন ব্যবস্থা চালু করার পাশাপাশি চালকল মালিকদেরকেও বাধ্যতামূলকভাবে লেভি সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসেন।

এর ফলে সৎ প্রফুল্লের উপর মজুতদাররা ক্ষেপে গিয়ে অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন। রাজনৈতিক পাকচক্র সৎ আদর্শবান নির্লোভী প্রফুল্ল সেনকেই বানিয়ে দিয়েছিল স্টিফেন হাউসের মালিক। এর ফল স্বরূপ ১৯৬৭ র ভোটে অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের কাছে মাত্র ৮২০ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। সেই বছর ভোটের ফলাফলে দেখা যায় যে কংগ্রেস সরকার ২৮০ র মধ্যে ১২৭ আসন জিতেছে, সরকার করতে গেলে আরো ১৪ টি আসন দরকার ছিল। এই সময় পিইউএল‌এফ ও ইউএলএফ মিলিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে সরকার তৈরি করে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের পরাজয়ের সাথে সাথে কংগ্রেসি সরকারের ও পরাজয় হলো।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

২০১১ সালের নির্বাচনে ৩৪ বছর পর বাম রাজত্বের অবসান ঘটান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বছর পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২৩৪ টি আসনে জয়লাভ করেছিলেন মমতার নেতৃত্বাধীন জোট। সেই বছর‌‌ই ১৯৮৭ সাল থেকে যাদবপুর কেন্দ্রে বরাবর জিতে আসা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তৃণমূল কংগ্রেসের মণীশ গুপ্তের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মণীশ গুপ্ত ও কিন্তু একসময় রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তৃণমূলে যোগদান করেন আর তার কাছেই পরাজিত হয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব।

দশ বছর পর ২০২১-এ আবার যেন রাজ্য রাজনীতিতে সেই একই চিত্র ফুটে উঠেছে। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন একদা তৃণমূলের দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত ও বর্তমানের দলত্যাগী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। ২০২১ এর নির্বাচনেও বিজেপির স্লোগান ‘পরিবর্তন’। তাই সব মিলিয়ে ২০২১ এর নির্বাচনে অতীতের ছায়া দেখছেন অনেকেই।

[aaroporuntag]
যদিও বুথ ফেরত সমীক্ষা মুখ্যমন্ত্রীকেই এই লড়াইয়ে এগিয়ে রাখছেন। তবে অতীতে একাধিকবার বুথ ফেরত সমীক্ষার সাথে ভোটের ফলাফলের আকাশ-পাতাল তফাৎ দেখা গিয়েছে। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমজনতা সকলেই এখন ২ তারিখ অবধি প্রতীক্ষা করছেন।