৩ দিন বর্ডারে কাটিয়ে ইউক্রেন থেকে ফেরা, কেমন ছিল ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদন : গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাতে শুরু করে রাশিয়া। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যেমন সেখানকার মানুষদের মধ্যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ঠিক তেমনি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারত থেকে সেখানে পড়তে অথবা অন্যকোন কাজে যাওয়া বাসিন্দাদের। তবে সরকারের সহযোগিতায় অধিকাংশ বাসিন্দায় সুস্থভাবে দেশে ফিরতে সক্ষম হচ্ছেন। ঠিক সেই রকমই সুষ্ঠু এবং সুস্থভাবে দেশে ফিরলেন বীরভূমের যুবক চন্দ্রনাথ দত্ত।

বীরভূমের রামপুরহাটের নারায়ণপুর গ্রামের হালদার পাড়ার চন্দ্রনাথ দত্ত ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনের পাল্টাভা যান। তবে ভারত সরকারের সহযোগিতায় এই যুবক শুক্রবার রাতে নিজের বাড়িতে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। বাড়িতে ফিরেই তিনি জানিয়েছেন কিভাবে এই কয়েকটা দিন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে আতঙ্কের আবহে দিন গুজরেছেন তিনি এবং তাঁর সঙ্গী সাথীরা।

ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে চন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন, “চারিদিকে রাশিয়ান সেনারা ঘিরে নিয়েছে। ঘনঘন সাইরেন বাজতো। মিসাইল দিয়ে আঘাত হানা হচ্ছিল। আমরা যেখানে ছিলাম ঠিক তার পাশেই ছিল একটি এয়ারপোর্ট। কিন্তু সেই এয়ারপোর্ট রাশিয়ান সেনারা প্রথমদিকেই মিসাইল উৎক্ষেপণ করে ধ্বংস করে দেয়। সাইরেন বাজিয়ে আমাদের ছুটে যেতে হতো বাঙ্কারে। আমাদের অধিকাংশ সময়ই বাঙ্কারের মধ্যেই কাটাতে হয়েছে।”

এর পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে তারা ইন্ডিয়ান এ্যাম্বেসীর নির্দেশের দিকে সবসময় খেয়াল রাখতেন বলে জানিয়েছেন। এরপর যখন পরিস্থিতি একেবারেই খারাপের দিকে চলে যায় সেই সময় চন্দ্রনাথ দত্ত এবং তার কয়েকজন সঙ্গী সিদ্ধান্ত নেন এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। তখন তারা একটি বাস ভাড়া করেন এবং সেই বাসে রওনা দেন রোমানিয়ান বর্ডারের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ সময় যাত্রা করার পর সমস্ত রকম ভয়কে দূর করে অবশেষে তারা পৌঁছান রোমানিয়ান বর্ডারে।

চন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন, “আমি যখন বর্ডারে পৌঁছায় তখন দেখি সেখানে প্রায় ১৪০০-১৫০০ জন বর্ডার পার করার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। এইভাবে বর্ডার ক্রস করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন। শুধু আমরা নয়, এর পাশাপাশি ওখানকার অর্থাৎ ইউক্রেনের স্থানীয়রাও অনেকে বর্ডার ক্রস করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে সবক্ষেত্রেই ইন্ডিয়ান এ্যাম্বেসীর তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু প্রোভাইড করা হয়।”

এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় কোন একটি রোমানিয়ার শহরে এবং সেই শহর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে। তারপর সেখানে দুই থেকে তিনদিন ক্যাম্পে রাখা হয় তাদের। পরবর্তীতে তাদের এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে করে আনা হয় মুম্বই এবং সেখান থেকে কলকাতা হয়ে বীরভূম ফিরেছেন চন্দ্রনাথ দত্ত।