ব্যস্ততম সময় থেকে একটু ছুটি পেলেই ভ্রমন পিপাসুদের মন আর বাড়িতে টেকে না। ছুটে চলে যায় নীল সমুদ্র সৈকত অথবা নিরিবিলি পাহাড়ের কোলে। এক্ষেত্রে বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হল দীপুদা অর্থাৎ দিঘা পুরী ও দার্জিলিং। বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়েই এই জায়গা গুলিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। উৎসাহী পর্যটকদের দার্জিলিং এর বুকে আরও একটা মনোরম জায়গার সন্ধান দেবো এই প্রতিবেদনে। দার্জিলিং তো বহুবার ঘুরে দেখেছেন। তবে দার্জিলিংয়ের ‘ক্লিনেস্ট ভিলেজ’ ঘুরে দেখেছেন কখনো?
বলা বাহুল্য, দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত প্রত্যেকটি ছোট ছোট গ্রামের সৌন্দর্য দেখলেই থমকে যায় মন। কিন্তু তারই মধ্যে সবচেয়ে নজরকারা গ্রাম রয়েছে সেখানে। যা পরিচিত দার্জিলিংয়ের ‘ক্লিনেস্ট ভিলেজ’ নামে। এটি একটি পাহাড়ি বস্তি যা সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের বাফার জ়োনের মধ্যে অবস্থিত। যার উচ্চতা প্রায় ৮,৫৫০ ফুট। বরফের চাদরে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য স্পষ্ট এই পাহাড়ি গ্রামে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায়। এই সুন্দর গ্রামের নাম হল ধোত্রে। এই গ্রাম থেকেই অধিকাংশ পর্যটক সান্দাকফু ট্রেকিং এর যাত্রা শুরু করে।
আরও পড়ুন: Sikkim Road: সিকিমের রাস্তায় এবার নতুন চমক! কেন্দ্রের তরফে কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে জানেন?
দার্জিলিঙের অন্যান্য গ্রামের সৌন্দর্য একদিকে আর ধোত্রের সবুজে ঘেরা ঘন জঙ্গলের সৌন্দর্য অন্যদিকে। সাথে বিফ মোমোর স্বাদ যেন এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। দার্জিলিং জেলার অন্য কোনও গ্রামে যা চাইলেও মিলবে না। ধোত্রে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাহাড়ি গ্রাম হিসেবে গত বছর গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর পর্যটন বিভাগের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। এই জায়গার পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য চাক্ষুষ করতে ছুটির দিনে একবার সময়ে কাটিয়ে আসুন এই ধোত্রে থেকে।
কীভাবে পৌঁছবেন এই ক্লিনেস্ট ভিলেজে?
ধোত্রে এই সুন্দর ও পরিষ্কার গ্রামটিতে দুটি দিক থেকে যেতে পারেন পর্যটকরা। দার্জিলিং শহর হয়ে পৌঁছে যেতে পারেন যা দার্জিলিং থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। আবার শিলিগুড়ি হয়েও যেতে পারেন পর্যটকরা, যার দূরত্ব প্রায় ১০৫ কিলোমিটার। মানেভঞ্জন থেকে ধোত্রের দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটারের হলেও, পর্যটকদের পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আসলে মানেভঞ্জনের পর থেকে রাস্তা খুব এলোমেলো। তবে শান্ত ও সুন্দর গ্রামের কোলে পৌঁছালেই এই দূরত্বও স্বার্থক বলে মনে হবে।
রিম্বিক যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায় দার্জিলিং মোড় থেকে। এই গাড়ি ধোত্রের ওপর দিয়েই যায়। প্রত্যেকের গাড়ি ভাড়া পড়ে ৬০০ টাকা করে।সিঙ্গালিলার জঙ্গলে এই পাহাড়ি গ্রাম থেকে একাধিক ট্রেকিং রুট চলে গিয়েছে। যেমন হাতে একদিন সময় থাকলে হাইকিংয়ে যাওয়া যায় টংলু ও টুমলিং। বহু পর্যটক ধোত্রে থেকে সান্দাকফু ট্রেকিং ও শুরু করেন। ধোত্রে যাওয়ার আদর্শ সময় হল বসন্তকাল। কারণ এই সময় এই জায়গা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। গ্রামে গেলেই দেখতে পাবেন চারিদিক ভরে রয়েছে রডোডেনড্রনে। এছাড়াও অর্কিড ও নানা ফুলের সেজে ওঠে গোটা গ্রাম।
ভিউ পয়েন্ট এর ও দেখা মিলবে কিন্ত এই গ্রাম থেকে। তার জন্য গ্রামের পিছনে জঙ্গলের রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে হবে। বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে এই ভিউ পয়েন্ট সেরা। দিনের মনোরম দৃশ্য মন ক্যামেরায় তুলে নিয়ে উপভোগ করতে পারেন ধোত্রের রাতের অপরূপ দৃশ্যও।ধোত্রে স্টার গেজিং এর আনন্দও উপভোগ করতে পারেন। একইসাথে এই সুন্দর গ্রামের মানুষের আতিথেয়তা মন ভালো করে দেওয়ার মতো। আর অপেক্ষা কীসের! বেরিয়ে পড়ুন তাহলে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে এই পাহাড়ি গ্রামের উদ্দেশ্যে।