করোনার মৃদু উপসর্গে কোথায় থাকবেন বাড়িতে না হাসপাতালে, নির্দেশিকা জারি কেন্দ্রের

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা সংক্রামিত রোগীরা বাড়িতে না হাসপাতলে থাকবেন এনিয়ে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য পর থেকেই সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “যাদের ঘরবাড়ি আছে, আইশোলেসনে থাকবার মতো ব্যবস্থা আছে, তাদের মধ্যে কারো করোনা পজিটিভ প্রাথমিক স্তরে হলে বাড়ি থেকেই চিকিৎসা করাতে পারবেন। মানুষ বাড়িতে ভালো থাকেন। হাসপাতালে গেলে অনেকরকম রোগীদের মধ্যে থাকতে হয়। সৃষ্টি হয় নানারকম সমস্যার। কিন্তু ঘরকে নিজের মতো করে রাখা যায়। ব্যক্তিরা নিজের মনোমত করে কারোর সঙ্গে না মিশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পারেন। হোম কোয়ারান্টাইন সব থেকে ভালো মডেল। পৃথিবীর অনেক জায়গায় এটা চালু আছে।”

তবে এরপরই মঙ্গলবার কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে এই আইসোলেশন নিয়েই একটি নয়া নির্দেশিকা বের করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে প্রকাশিত হওয়া নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কারোর শরীরে সংক্রমণের মৃদু উপসর্গ অথবা করোনা পজিটিভ হলেও পুরোপুরি উপসর্গ দেখা না গেলে বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকুন। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত যে নির্দেশিকা ছিল তাতে বলা হত, কারো শরীরে করোনা সংক্রমণ পজিটিভ ধরা পড়লে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পাঠাতে হবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। আর এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও আইসিএম আর-এর তরফ থেকে তিন ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা বলা হয়েছিল।

নির্দেশিকা অনুযায়ী তিন ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্র

১) কোভিড কেয়ার সেন্টার : যে সকল ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে অথচ তাদের তেমন কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়নি তাদের জন্য এই কোভিড কেয়ার সেন্টার। অর্থাৎ উপসর্গ না থাকা অথবা মৃদু উপসর্গ যুক্ত করোনা সংক্রামিতদের জন্য এই সেন্টার।

২) কোভিড হেল্থ কেয়ার সেন্টার : যে সকল করোনা সংক্রামিত ব্যক্তিদের মেডিকেল সাপোর্ট ও অক্সিজেন ইত্যাদির প্রয়োজন হয়ে উঠছে তাদের জন্য এই সেন্টার।

৩) কোভিড হাসপাতাল : যে সমস্ত করোনা সংক্রামিত রোগীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক সেই সকল রোগীদের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

তবে এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে নয়া নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, যে সমস্ত ব্যক্তিদের করোনা সংক্রমণের উপসর্গ মৃদু এবং বাড়িতে আইসোলেশনের সুবিধা রয়েছে তারা বাড়িতেই থাকুন। এই সমস্ত রোগীদের বলা হয়েছে ভেরি ‘মাইল্ড বা প্রি-সিম্পটোম্যাটিক’। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে এমনটা জানানো হলেও এও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এই সমস্ত রোগীরা বাড়িতে থাকলেও সরকারি নজরদারিতে থাকতে হবে। এজন্য রোগীদের একটি চুক্তিপত্রে সই করতে হবে। পাশাপাশি আরোগ্য সেতু অ্যাপ ইনস্টল করে রেখে সক্রিয় রাখতে হবে। বাড়িতে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে কয়েকটি ব্যবস্থাপনার কথা।

সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে ব্যবস্থাপনাগুলি হলো

১) আইসোলেশনে থাকা রোগীর দেখভালের জন্য ২৪ ঘন্টা একজন আয়া থাকতে হবে। যিনি সবসময় হাসপাতালে সাথে যোগাযোগ রাখবেন।

২) রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রতিটি ব্যক্তি ও রোগীর দেখভাল করা আয়াকে হাইড্রক্সি ক্লোরোক্যুইন প্রফিল্যাক্সিস ওষুধ খেতে হবে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী।

৩) রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতি সম্পর্কে সবসময় স্বাস্থ্য আধিকারিকদের আপডেট দিতে হবে।

৪) রোগীর কোন রকম উপসর্গ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের জানাতে হবে। পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে রোগীর সংস্পর্শে আসা ও দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের।

উপসর্গ বলতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে কি বলা হয়েছে?

নির্দেশিকা অনুসারে বলা হয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মানসিক কোন সমস্যা, অবসাদ, ঘুমের সমস্যা, মুখ ও ঠোঁটের রঙ পরিবর্তন, নীলাচে ছাপ ইত্যাদি। আর এই সকল উপসর্গ দেখা দিলেই রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে ল্যাব টেস্ট করাতে হবে। হোম আইসোলেশন থেকে রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী উপরিউক্ত তিনটির মধ্যে যেকোনো একটি সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে।

প্রসঙ্গত, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হোম আইসোলেশনের বক্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতি সরগরম হলেও মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এহেন নির্দেশিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বলে অনেকেই তাদের মন্তব্য পোষন করেছেন।