সংসার চালাতে রাস্তায় ঝাঁট দিতেন, সেই রিঙ্কুই আজ KKR-র হিরো

২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশের হয়ে লিস্ট এ-তে ডেবিউ হয় রিঙ্কু সিং-এর (Rinku Singh)। বছর দু’য়েক পরে তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। ২০১৭ সালে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১০ লক্ষ টাকায় রিঙ্কুকে কিনেছিল। এরপর ২০১৮ সালে শাহরুখ খানের (Sahrukh Khan) কলকাতা নাইট রাইডার্স ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে রিঙ্কুকে দলে নেয়। গত মরসুমে তিনি সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন। এ বার দেখার আইপিএল-১৬-তে সুযোগ পেলে রিঙ্কু কেমন পারফর্ম করেন।

ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেটের (Cricket) প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল রিঙ্কুর। স্কুলে পড়াকালীনই রিঙ্কু ক্রিকেটে অনেকটা সময় দিতেন। সেই সময় বাবার থেকে ক্রিকেট খেলার জন্য মারও জুটত রিঙ্কুর । অনেক সময় তাঁর বাবা বাড়ির সামনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতেন লাঠি হাতে নিয়ে। বাবার কাছে মার খাওয়া থেকে মাঝে মধ্যে রিঙ্কুকে বাঁচিয়ে নিতেন তাঁর দাদা।

রিঙ্কুর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে জন্ম হওয়ার পর থেকেই রিঙ্কুকে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছ্বল ছিল না। রিঙ্কুর বাবা গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজ করতেন।

পরিবারে অভাব অনটন দেখে একটা সময় রিঙ্কু ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নও ত্যাগ করতে বসেছিলেন। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে হিমশিম খেত রিঙ্কুর পরিবার। একটা সময় ক্রিকেটের কথা না ভেবে কাজ খুঁজতে গিয়েছিলেন রিঙ্কু। সেখানে তাঁকে জানানো হয়েছিল বাড়ির কাজ করতে হবে। ঘর মুছতে হবে,ঝাঁট দিতে হবে। এই কাজ মেনে নিতে পারেননি রিঙ্কু। বাড়ি ফিরে মাকে জানান ক্রিকেটেই নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে চান তিনি। ধীরে ধীরে রিঙ্কুর ভাগ্যের চাকা ঘোরে। ২০১২ সালে স্কুলের এক টুর্নামেন্টে রিঙ্কু বাইক জিতেছিলেন। তিনি সেই বাইকের চাবি তুলে দিয়েছিলেন তাঁর বাবার হাতে। কারণ তাঁর বাবাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে হত।

বৃহস্পতিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে (Eden gardens) ৮১ রানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে (Royal Challengers Bangalore) হারিয়ে দিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এই ম্যাচে শার্দূল ঠাকুর ভালো খেললেও, কম যান নি রিঙ্কু সিং। একটা সময় যখন কেকেআর ব্রিগেডের একের পর এক ব্যাটার আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছিলেন, সেই সময় একটা দিক কার্যত ধরে রাখলেন রিঙ্কু। আর যখন দরকার পড়ল, ঠিক একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের রং একেবারে বদলে দিলেন। হতে পারে উত্তর প্রদেশের এই ব্যাটার RCB-র বিরুদ্ধে হাফ সেঞ্চুরিটা মিস করেছেন, কিন্তু তাঁর ব্যাটিং ইতিমধ্যেই নাইট সমর্থকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।